‘মুক্তবিশ্বে প্রকাশনা’ শীর্ষক দুদিনের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শেষদিনে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকার বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থার প্রতিনিধি ও সাহিত্যিকদের কাছ থেকে এই আহ্বান আসে।
একইসঙ্গে প্রকাশনা শিল্পে বাধাবিপত্তি ডিঙিয়ে একযোগে কাজ করার জন্য দক্ষিণ এশিয়া প্রকাশক ও বিক্রেতা সংগঠন করা যেতে পারে বলেও অভিমত এসেছে লেখক-প্রকাশকদের কাছ থেকে।
‘দেশী প্রকাশনার আন্তর্জাতিকীকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে দেশ-বিদেশের প্রথিতযশা লেখক, সাহিত্যিক ও প্রকাশকরা অভিযোগ করেন, অনুবাদ সাহিত্যের বিপুল চাহিদা থাকলেও গুণগত মানের অনুবাদ হচ্ছে না। অনুবাদের ক্ষেত্রে ‘বদলে যাচ্ছে’ মূল সাহিত্যের ভাবার্থ।
সেমিনারের সঞ্চালক আর্টস ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা বলেন, “প্রকাশকদের স্বাধীনতার বিষয়ে সবসময়ই দ্বন্দ্ব চলে আসছে।
“আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভিনদেশি সাহিত্যের আবেদন যখন বাড়ছে, তখন নীতিনির্ধারকদের নানা বিধিনিষেধে আমাদের সুযোগ কমছে।”
দক্ষিণ এশিয়ায় এক দেশের বই অন্য দেশে পৌঁছাতে পারছে না বলে অভিযোগ করেন নেপালের জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশনা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক লিখাত প্রসাদ পাণ্ডে।
দেশি সাহিত্যকে বিশ্ববাজারে পৌঁছে দিতে সরকারি পর্যায়ে একটি অনুবাদ সেল গঠন করার আহ্বান জানান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
“দেশি সাহিত্যকে বিশ্ববাজারে পৌঁছে দিতে সরকারি পর্যায়ে একটি অনুবাদ সেল গঠন করতে হবে। এই সেলের বিশেষজ্ঞ প্যানেলটি ঠিক করে দেবে, আমাদের অনুবাদ সাহিত্যের মান আসলে কেমন হওয়া উচিত এবং ঠিক কোন সাহিত্যগুলো বিশ্ববাজারে পৌঁছে দেওয়া হবে।”
‘প্রকাশনায় নারী’ শিরোনামে আলোচনায় ভারতীয় কবি মন্দিরা সেন বিভিন্ন দেশের নারী প্রকাশকদের অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, “বিভিন্ন সাহিত্য আন্দোলনে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও মূল ধারার সাহিত্য চর্চায় কখনও নারীদের অবদানের কথা স্বীকার করা হয় না। কিন্তু দেখুন, অর্থনৈতিক নানা বাধা পেরিয়ে নারীরা দক্ষ হয়ে উঠছেন।”
‘প্রকাশনার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা’ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। এতে অংশ নেন শ্রীলঙ্কান প্রকাশক দিনেশ কুলাতাঙ্গা, নেপালের লিখাত প্রকাশ পাণ্ডে, ভারতের ইমানুল হক ও বাংলাদেশের মাসুদ আহমেদ।
ভাষার বৈরিতাকে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ‘বড় অন্তরায়’ হিসেবে উল্লেখ করে বক্তারা একটি আন্তর্জাতিক মানের অনুবাদকেন্দ্র গড়ে তোলার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারেও একমত হন তারা।
পশ্চিমবঙ্গের কবি ইমানুল হকের মতে, বাংলা সাহিত্যের বিস্তারে পাইরেসি ‘বড় সমস্যা।’
“কপিরাইট আইন থাকলেও তার প্রভাব নেই সাহিত্যবাজারে। হরহামেশা পাইরেসি রোধে এখন রাষ্ট্রকে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। আইন-সমঝোতা অনেক হয়েছে, এখন কঠোর হতেই হবে।”
প্রকাশকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এই ডাটাবেসে আমাদের সাহিত্যের সব তথ্য থাকবে। আইসিটি ডিভিশন এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে।”
পলক আরও বলেন, “গ্লোবাল নেটওয়ার্কের যুগে কারো সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের লেখক-প্রকাশরাও গ্লোবাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।”
সমাপনী অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আবুল নাসের চৌধুরী, সংস্কৃতি সচিব আক্তারী মমতাজ ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।