পনের বছর পর দেশের সংকটাপন্ন প্রজাতির প্রাণীদের ওপর জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশের প্রাক্কালে এ তথ্য জানিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন), বাংলাদেশের স্তন্যপায়ী সংক্রান্ত জরিপের প্রধান মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীন বন বিভাগের অর্থায়নে আইইউসিএন ‘বাংলাদেশে ঝুঁকিতে থাকা বন্যপ্রাণী প্রজাতি’র তালিকা করতে এ জরিপ করেছে।
বুধবার আনুষ্ঠনিকভাবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘আপডেটিং স্পিসিস রেড লিস্ট অব বাংলাদেশ’ প্রকাশ করা হবে।
এই রেড লিস্ট তৈরি করতে গত দুই বছর ধরে দেশের প্রায় এক হাজার ৬০৯ প্রজাতির প্রাণীর ওপর জরিপ কাজ চলেছে বলে জানান আইইউসিএন-বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত জরিপের মোস্তফা ফিরোজ।
প্রধান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের এই অধ্যাপক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০০০ সালে প্রথম রেড লিস্ট প্রকাশ করা হয়। তাতে পূর্ণাঙ্গ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় নি।
“এর ১৫ বছর পর পূর্ণাঙ্গভাবে জরিপ কাজ চালিয়ে বন্যপ্রাণীর হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরা হবে এবার।”
স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিষয়ে জরিপের তথ্য তুলে ধরে এই শিক্ষক জানান, ১৩৮টি স্তন্যপায়ীর ওপর ‘ইভালুয়েশন’ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি প্রজাতি উনিশ’ শতকেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
গত ১৫ বছরে ২১টি নতুন স্তন্যপায়ী শনাক্ত করা গেলেও বিলোপ ঘটেছে একটির, আর বিপন্নের তালিকায় রয়েছে ৩৮টি।
তিনি বলেন, “এবার আমরা দেখলাম- গত ১৫ বছরে একটি স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটেছে। যার নাম মন্থর ভাল্লুক; বৈজ্ঞানিক নাম স্লথ বিয়ার)। এছাড়া ১৭টি প্রজাতির অতি বিপন্ন, ১২টি প্রজাতি বিপন্ন ও ৯টি প্রজাতি ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে।”
এর আগে ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো দেশের বন্যপ্রাণী বিষয়ে এ ধরনের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে কাজ করেছিলেন বন অধিদপ্তরের সাবেক উপ প্রধান বন সংরক্ষক তপন কুমার দে।
সম্প্রতি অবসরে যাওয়া এই বন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০০০ সালের পর বন্যপ্রাণীর হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হবে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির ‘অতি বিপন্ন’, ‘বিপন্ন’ ও ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ তালিকা তুলে ধরা হবে।
“আমরা আগে যা করেছিলাম, এবার তার থেকে বেশি হেরফের হবে না। তবে প্রজাতিগুলোর হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরা হবে।”
আইইউসিএন-এর রেড লিস্ট প্রকাশকালে উভচর, সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ সাত প্রজাতির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন-পাহাড়-জলাভূমির আবাস বিনষ্ট হওয়া ছাড়াও সংরক্ষণ কার্যক্রমের দুর্বলতা বা আদৌ না থাকা, দুর্বল আইন, চোরা শিকার, নদীর নাব্যতা হ্রাস ও দূষণসহ পরিবেশের সামগ্রিক ভারসাম্যহীনতা পরিস্থিতি আরও সঙ্গীন করে তুলেছে।
এজন্য বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম ও সংরক্ষিত এলাকা নিরাপদ রাখার পাশাপাশি নতুন অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন যুগোপযোগী করা ও তা প্রয়োগের ওপর জোর দিয়েছেন তারা।