চট্টগ্রামের ও আর নিজাম রোডের যে বাসায় তারা থাকেন, সেখান থেকে অন্য কোথাও সরে যাওয়ার কথাও তিনি ভাবতে শুরু করেছিলেন বলে প্রতিবেশী এক নারী জানিয়েছেন।
রোববার ভোরে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে বাসা থেকে বেরিয়ে মাত্র কয়েকশ গজ দূরে জিইসি মোড়ের কাছে খুন হন মিতু।
ছয় বছর বয়সী ছেলের বিবরণ অনুযায়ী, মোটরসাইকেলে করে আসা তিনজন তার মাকে প্রথমে ছুরি মারে, তারপর গুলি করে চলে যায়।
পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী মিতুকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার সঙ্গে গত দুই বছরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার মিল পাওয়া যায়, যেগুলোতে জঙ্গি সম্পৃক্ততা পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
চলতি বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকী, টাঙ্গাইলে হিন্দু দর্জি নিখিল চন্দ্র জোয়ারদার, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে সন্তগৌরীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়, এবং গতবছর আশুলিয়ায় পুলিশ হত্যা, দিনাজপুরে ইতালীয় এক পাদ্রীকে হত্যা চেষ্টার ঘটনাতেও হামলাকারী ছিল তিনজন। মোটর সাইকেলে আসে, অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ছুরি, চাপাতি, পিস্তল।
এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ ও র্যাব। বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ঢাকার পুলিশ সদরদপ্তরে যাওয়ার আগে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উত্তর-দক্ষিণ জোনের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
ও আর নিজাম রোডে ১৫ তলা একটি ভবনের অষ্টম তলায় বাবুল আক্তারের বাসা। ছয় বছরের ছেলে আর চার বছরের মেয়ে ছাড়াও কিশোরী এক গৃহকর্মীকে নিয়ে ওই বাসায় থাকছিলেন মিতু।
শারমীন আক্তার নামে তার এক প্রতিবেশী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত কিছু দিনে বেশ কয়েকবার নানাভাবে হুমকি পাওয়ার কথা বলেছিলেন মিতু। স্বামী ঢাকায় থাকায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে উদ্বেগে ভুগছিলেন।
“উনি বেশ কয়েকবার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা বলেছেন। কয়েকদিন আগে একবার বলেছিলেন, ‘এই বাসা সবাই চিনে গেছে, বাসা বদলে ফেলতে হবে’।”
পটুয়াখালীর মেয়ে মিতু পুলিশের জীবন আর পেশাগত ঝুঁকির কথা ভালোই জানতেন। তার বাবা মোশাররফ হোসেনও অবসরে গিয়েছিলেন পুলিশের ওসি হিসেবে।
মিতুর শ্বশুর, অর্থাৎ বাবুলের বাবা আবদুল ওয়াদদু মিয়াও চাকরি করেছেন পুলিশে। তাদের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকূপায় বলে বাবুলের খালাতো ভাই মাজেদুল ইসলাম জানান।
স্ত্রী খুন হওয়ার খবর পেয়ে হেলিকপ্টারে চট্টগ্রামে পৌঁছান পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। দামপাড়া পুলিশ লাইন থেকে তিনি সরাসরি যান চট্টগ্রাম মেডিকেলে, যেখানে রাখা হয়েছে মিতুর লাশ।
এই হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও তাদের স্ত্রীরা ছুটে যান ও আর নিজাম রোডে বাবুল আক্তারের বাসায়। মা হারা দুই সন্তানকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন তারা।
রোববার সকালে কনস্টেবলদের কেউ না আসায় মিতু নিজেই ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে বেরিয়ে খুন হন। তার ছোট মেয়ে তখন বাসায়, গৃহকর্মীর কাছে।
গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার মোক্তার আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু বাবুল আক্তার জঙ্গি দমনে অনেক কাজ করেছেন, তারাই পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি। তবে সব সম্ভাবনাই আমরা খতিয়ে দেখব।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বলেছেন, জঙ্গিরাই বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন।
জঙ্গি দমনে দায়িত্বরত অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিবারের নিরাপত্তা জোরদারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।