মঙ্গলবার বিকেলে এশিয়াটিক সোসাইটিতে ‘ঢাকায় গেরিলাযুদ্ধ ১৯৭১’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আজকে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। চার পাশে যেসব ঘটনা ঘটছে তাতে প্রতিটি মানুষই সংক্ষুব্ধ।
“যেখানে ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষের মধ্যে ভেদ করা হচ্ছে। ব্লগারদের মারার সময় বলা হয়েছে, তারা নাস্তিক। শুধু আস্তিক বলেই নয়… বৌদ্ধ ভিক্ষু, হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান যাজক- এরা কিন্তু আস্তিক। কিন্তু এই আস্তিকেও কাজ দিবে না।”
“মুসলমান হলেও হবে না.. পীর সাহেবকে হত্যা করা হয়েছে। মাজারের খাদেমকে হত্যা করা হয়েছে মাজার পছন্দ নয় বলে; আবার শিয়া, আহমদিয়া। অর্থাৎ যারা কাজগুলো করছে তারা যা বোঝে সেটা অনুসরণ না করলেই খুন করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “এই বাংলাদেশতো আমরা ভাবতেই পারিনি। পাকিস্তান আমলেও আমরা এটা দেখি নাই। বাংলাদেশে কেন হলো? এসবের আমরা নিরবে সহ্য করতে পারি না। এদের বিরুদ্ধে পথে নামতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতির আলোকে আমাদের দেশটাকে গড়ে তুলতে পারলে গেরিলা যোদ্ধাদের সম্মান দেওয়া হবে।”
ঢাকার ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার ও দু’টি লেখা নিয়ে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত বইয়ের ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন আনিসুজ্জামান।
তিনি বলেন, “বইটিতে আমরা দেখতে পাবো কি অসীম সাহস নিয়ে তারা যুদ্ধ করেছিল। এদের কারণে আমরা দেশ স্বাধীন করতে পেরেছি। সেই মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা যথেষ্ট সম্মানও জানাতে পারিনি এবং তারা যে বাংলাদেশ গঠনের কথা ভেবেছিলেন সেখানে এখনো পৌঁছাতে পারিনি।
“আমাদের যে বক্তব্য রয়ে গেলে সেটি হচ্ছে যারা এই বাংলাদেশকে নয় মাসে জীবনদান করেছেন, নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের ত্যাগ এবং তাদের লক্ষ্য মনে রেখে, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় যে আদর্শের বলা হয়েছিল সেটা অবশ্যই গড়ে তোলা দরকার।”
তিনি বলেন, শহরের শিক্ষিত সচেতন মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম বলতে আমরা যা বুঝি তা সচেতনভাবে হয়তো ঢুকেছে। কিন্তু যারা ৮৫ ভাগ যোদ্ধা গ্রামের, অশিক্ষিত, নিরক্ষর ও কৃষকের সন্তান তাদের মধ্যে এই দেশপ্রেম কী করে প্রবেশ করল সেটা নিয়ে আমি এখনো ভাবিত হই।”
“কোন সেই লক্ষ্য যেটা তাদেরকে একটি মাত্র থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল নিয়ে রাতের অন্ধকারে সর্বাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আমি এখনো সেটা বুঝতে পারি না।”
বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠ তাদেরকে সেই নতুন দেশ নির্মাণের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ করেছিল মন্তব্য করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী।
এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বইয়ের প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক শরীফ উদ্দিন আহমেদ, দুই সম্পাদক অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন ও অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েকজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বই ও ফুল তুলে দেওয়া হয়।