অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন মঙ্গলবার চলতি বছরের যে গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্স প্রকাশ করেছে, তাতে এ ধরনের দুর্দশনায় পড়া মানুষের সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ।
যারা কারখানা, খনি বা খামারে নামমাত্র মজুরিতে দাসের মতো শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছেন, দালালের খপ্পরে পড়ে বাধ্য হচ্ছেন যৌনকর্মীর জীবন যাপনে, এ যুগেও যাদের ঋণ শুধতে না পেরে কাটাতে হচ্ছে গোলামের জীবন, অথবা বাবা-মায়ের ঋণের দায় মাথায় নিয়ে যাদের জন্ম হচ্ছে কৃতদাসের মতো- তাদের সংখ্যা ধরেই এ সূচক তৈরির কথা জানিয়েছে ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন।
গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্স বলছে, বিশ্বজুড়ে যে ৪ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ এভাবে ‘আধুনিক দাসের’ জীবন কাটাচ্ছে, তাদের ৫৮ শতাংশই ভারত, চীন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তান- এই পাঁচ দেশের বাসিন্দা।
১৬৭ দেশের এই সূচকের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ কোটির বেশি মানুষের বাংলাদেশে ১৫ লাখ ৩১ হাজার মানুষ দাসের জীবন কাটাচ্ছে, যা মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ।
মোট জনসংখ্যার অনুপাতে বিচার করলে এ দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দশম।
এই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশনের ২০১৪ সালের সমীক্ষায় তিন কোটি ৫৮ লাখ মানুষের একটি হিসাব পাওয়া গিয়েছিল, যারা ‘দাসের জীবন যাপনে’ বাধ্য হচ্ছেন। অর্থাৎ, মাত্র দুই বছরে সেই কাতারে যুক্ত হয়েছে এক কোটি মুখ।
# আধুনিক এই দাসদের দুই তৃতীয়াংশই এশিয়ার বাসিন্দা।
# ভারতে এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, ১ কোটি ৮৩ লাখ।
# সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীন এই তালিকায় আছে দ্বিতীয় অবস্থানে; সেখানে ৩৪ লাখ মানুষ এ ধরনের দুর্দশার জীবনে বাধ্য হচ্ছেন।
# তালিকার তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে ‘দাসের জীবনে’ বাধ্য হচ্ছেন ২১ লাখ মানুষ।
# মোট জনসংখ্যার অনুপাতে বিচার করলে সবচেয়ে খারাপ চিত্র পাওয়া যায় উত্তর কোরিয়ায়। সেখানে প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন এই দুর্দশার শিকার।
ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এন্ড্রু ফরেস্ট বলেন, আগের জরিপের তুলনায় এবার তথ্য সংগ্রহের হার ভালো হওয়ায় আরও স্পষ্ট চিত্র পাওয়া গেছে। এ কারণে ‘দাসের জীবন যাপনে’ বাধ্য হওয়া মানুষের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে বলে মনে হতে পারে।
পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থানে মানুষের বাস্তুচ্যুতি এবং বিশ্বজুড়ে দেশান্তরি হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের তুলনায় বেশি মানুষ আধুনিক দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হচ্ছে।
আধুনিক এই দাসত্বের অবসানে সরকারের পদক্ষেপ ও তাতে সাফল্যের বিবেচনায় সূচকে ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে ‘বি’ রেটিং।
এর অর্থ হলো, বাংলাদেশ সরকার এ সমস্যায় সাড়া দিতে উদ্যোগী হয়েছে এবং কিছু মানুষকে সহায়তাও দিতে পারছে। ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় এমন কাঠামো যুক্ত করতে পেরেছে, যাতে কাউকে দাসের জীবনে বাধ্য করা হলে দোষী ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনা যায়। পাশাপাশি এ ধরনের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা দিতে একটি নীতি কাঠামোও তৈরি করতে পেরেছে।
এই বিচারে বাংলাদেশের স্কোর একশর মধ্যে ৪৯.৩২। আর তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থায় থাকা নেদারল্যান্ডসই কেবল কেবল ‘এ’ রেটিং পেয়েছে। দেশটির স্কোর ৭৮.৪৩।
অস্ট্রেলিয়ায় মাইনিং ব্যবসা করে কোটিপতি হওয়া এন্ড্রু ফরেস্ট রয়টার্সকে বলেন, “আমরা এই দাসত্ব মেনে নেব কি না- তা আমাদের স্পষ্ট করতে হবে। যে দেশ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা না নেবে, তাদের সঙ্গে আমাদের সব ব্যবসা বন্ধ করতে হবে।”