যুদ্ধাপরাধ: ‘রাজাকার ৩ ভাইয়ের’ রায় বুধবার

হবিগঞ্জের দুই সহোদর ও তাদের এক চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় জানা যাবে বুধবার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2016, 05:59 AM
Updated : 31 May 2016, 05:59 AM

বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই রায় ঘোষণা করবে।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা এই মামলাটি আজ কার্যতালিকায় এলে বিচারক রায় ঘোষণার দিন ঠিক করে দেন।”  

এর আগে প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ১১ মে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখে।

তিন আসামি বানিয়াচং উপজেলার মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, তার ছোট ভাই মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া এবং তাদের চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাক এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চারটি ঘটনায় হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গোলাম কিবরিয়া, পারভেজ হোসেন ও এম. মাসুদ রানা।

প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ১২ জন এবং আসামিপক্ষে সাত জনের সাক্ষ্য শুনেছে আদালত।

গতবছর ২৯ সেপ্টেম্বর যুদ্ধাপরাধের চার ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে এই তিন ভাইয়ের বিচার শুরু করে আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২১ অক্টোবর।

আসামিদের মধ্যে মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া (৬৫) হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলাধীন খাগাউড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তার ভাই মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া (৬০) বর্তমান চেয়ারম্যান।

দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্ত দল। তদন্তের সময় ২১ জনের বক্তব্য শোনেন তদন্ত কর্মকর্তা।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় খাগাউড়া গ্রামে নেজামে ইসলামের এমএনএ সৈয়দ কামরুল আহসানের বাড়িতে রাজাকার ক্যাম্প ও টর্চার সেল ছিল। আর তাদের বড় ভাই কলমধর ছিলেন খাগাউড়া ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এবং ছোট ভাই মোস্তফা ছিলেন রাজাকার কমান্ডার।

প্রসিকিউশনের আবেদনে ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল দুই সহোদরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ওইদিনই বানিয়াচং থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে স্থানীয় পুলিশ। ১২ ফেব্রুয়ারি তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

অন্যদিকে গত বছরের ১৭ মে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির দুইদিন পর মহিবুর-মুজিবুরের চাচাতো ভাই রাজ্জাককে মৌলভীবাজারের আথানগিরি পাহাড় থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওইদিনই ট্রাইব্যুনালে তিনজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় প্রসিকিউশন। ট্রাইব্যুনাল ৩১ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়।

চার অভিযোগ

অভিযোগ ১: বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর বানিয়াচং উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আকল আলী ও রজব আলীকে হত্যা করে লাশ গুম করে আসামিরা।

অভিযোগ ২: আসামিরা পাকিস্তানি বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মেজর জেনারেল এমএ রবের বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করে।

অভিযোগ ৩: একই দিন খাগাউড়া এলাকার উত্তরপাড়ায় আসামিদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী মঞ্জব আলীর স্ত্রী ও আওলাদ ওরফে আল্লাত মিয়ার ছোট বোনকে ধর্ষণ করে। পরে আল্লাত মিয়ার বোন বিষপানে আত্মহত্যা করেন।

অভিযোগ ৪: একাত্তর সালের ভাদ্র মাসের যে কোনো একদিন আনছার আলীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন চালায় আসামিরা। ওই নির্যাতনে পঙ্গু হন আনছার আলী।

২০০৯ সালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আকল মিয়ার স্ত্রী ভিংরাজ বিবি হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই তিনজনসহ মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা করেন। পরে মামলাটি ট্রাইব্যুনালে আসে।