তথ্যকে মৌলিক অধিকার ঘোষণার আহ্বান

জনগণের তথ্য পাওয়া নিশ্চিত করতে তথ্যকে মৌলিক অধিকার ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2016, 07:22 PM
Updated : 30 May 2016, 07:22 PM

বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেছে, “এখন সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার বড় হাতিয়ার হচ্ছে তথ্য। যতদিন আমরা তথ্যকে উন্মুক্ত করতে না পারি, এর সহজ একসেস নিশ্চিত করতে না পারি; ততদিন যত কথাই বলি, যত উন্নয়নই হোক না কেন, বঞ্চনা থেকে মুক্তি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবক্ষয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারব না।

“অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের মতো মৌলিক অধিকারে তথ্যকেও যোগ করা উচিৎ। তথ্যকে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করতে না পারলে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার নতুন আর কোনো সম্ভাবনা নেই।”

সোমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে তথ্য অধিকার আইন নিয়ে এক সেমিনারে একথা বলেন অধ্যাপক মীজানুর।

বাংলাদেশ তথ্য কমিশনের পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের উদ্যোগে এ সেমিনার হয়।

তথ্য কমিশনের পরিচালক জাফর রাজা চৌধুরী অনুষ্ঠানে একটি তথ্যচিত্র দেখিয়ে বলেন, নারায়ণগঞ্জে একজন আসামির জামিনের জন্য একটি হাসপাতাল থেকে জাল চিকিৎসা সনদ দেওয়া হয়েছিল। পরে দীর্ঘ জটিলতার পর তথ্য কমিশনের হস্তক্ষেপে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রকৃত তথ্য দিতে বাধ্য হয়েছিল। তথ্য না দেওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে জরিমানা করা হয়েছিল।

বিষয়টির উদাহরণ টেনে অধ্যাপক মীজানুর বলেন, “এসব বিচার করা, শাস্তি দেওয়া অনেক সময়ের ব্যাপার। আইনটি কার্যকর করতে চাইলে একটি জাতীয় তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে হবে। কারণ জনগণ অফিসে অফিসে ঘুরে তথ্য পাবে না, এভাবে বেশি লোক উপকৃত হবে না।

“জাতীয় তথ্যভাণ্ডার করলে মানুষ এখান থেকেই তথ্য পাবে, অফিসে অফিসে তাদের যেতে হবে না। আর তথ্যের স্বচ্ছতা থাকলে তথ্য কমিশনকেও এত বিচার করতে হবে না।”

“আর সাংবাদিকদের জন্যও দুঃসংবাদ থাকবে। কারণ তথ্যের স্বচ্ছতা থাকলে আর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রয়োজন হবে না,” এই প্রসঙ্গে বলেন তিনি। 

উপাচার্য এমপিদের সম্পদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্যের পাশাপাশি ভূমি অফিস, হাসপাতালসহ সব কার্যালয়ের তথ্য অনলাইনে জাতীয় তথ্যভাণ্ডারে যুক্ত করার প্রস্তাব দেন।

সেমিনারে তথ্য কমিশনার খুরশীদা বেগম সাঈদ আইনটির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, প্রচলিত অন্যান্য আইনগুলো দিয়ে সরকার জনগণের উপর খবরদারি করে। কিন্তু এই আইনটির মাধ্যমে সরকারের উপর নাগরিক খবরদারি করে।

তথ্য অধিকার আইনে ২০টি ক্ষেত্রে তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।

এ বিষয়ে তথ্য কমিশনার বলেন, “আইনের ৭ নম্বর ধারাটি আরও উন্মুক্ত করা যায় কিনা সে বিষয়টি আমরা ভাবছি। আরও কেস স্টাডি পেলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।

“আমরা তো শুরু করলাম, আগামীতে নতুনদের হাত দিয়ে আইনটি আরও শক্তিশালী হবে।”

অধ্যাপক হেলেনা ফেরদৌসীর সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিম ভূঁইয়া, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক প্রিয়ব্রত পাল।