অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ!

ঢাকা মেডিকেল কলেজের একটি নতুন ভবন নির্মাণে অনুমোদনহীন অর্থ ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনেছে সরকারেরই একটি তদারকি সংস্থা।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2016, 05:14 PM
Updated : 30 May 2016, 05:34 PM

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তদারকি সংস্থা বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রকল্পের সমাপ্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এ অভিযোগ এনেছে।

তারা বলছে, প্রকল্পটির বিভিন্ন ক্রয় প্রক্রিয়ায় সরকারি অর্থব্যয়ে অস্বচ্ছতার খোঁজ পাওয়া গেছে, যদিও তা নাকচ করেছেন প্রকল্প পরিচালক।

২০০৮ সালে ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ (২য় পর্য়ায়)’ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়, যাতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬০ কোটি টাকা।

পরে তা বাড়িয়ে ১০৬ কোটি ৯২ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়।

প্রকল্পটির পণ্য ও সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী ভৌত নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপর ন্যস্ত ছিল।

আইএমইডি সমাপ্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের পরিচালক রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে উত্তোলন করা ৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা অব্যয়িত অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা দেননি।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় থাকা স্যানিটারি, পেইন্টিং, ডোর ফিটিংস, অ্যালুমিনিয়াম রিফলেটিং, মাটি অপসারণ, গ্যাস সংযোগ, বোন মেরু ইউনিটসহ আরও বেশ কিছু কাজেও ব্যাপক অনিয়ম পাওয়া গেছে।

মূল ভবনের পাশাপাশি এসব কাজ করার কথা থাকলেও তা না করে আলাদাভাবে করা হয়েছে, যার মধ্যে ভবনে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

বাকি কাজ লিমিটেড টেন্ডারিং মেথডে (এলটিএম) ১৯টি চুক্তির মাধ্যমে ৭ কোটি ৪ লাখ ব্যয়ে করা হয়।

আইএমইডির প্রতিবেদনে এলটিএম পদ্ধতিতে ৭ কোটি ৪ লাখ টাকার সরকারের অনুমোদন ছাড়াই ব্যয় করা হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। এতে ৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা অনুমোদন বহির্ভূতভাবে ব্যয় হয়েছে।

এসব কাজের পাশাপাশি প্রকল্পের আওতায় ঢাকা মেডিকেল মসজিদ সংস্কারেও অনিয়ম পেয়েছে আইএমইডি।

সংস্কারের জন্য বরাদ্দ ৩০ লাখ টাকা থাকলেও দুটি চুক্তির মাধ্যমে মোট ৬০ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়েছে বাস্তবায়ন সংস্থা।

এর বাইরে ভবনের জন্য সোলার সিস্টেম স্থাপন বাবদ ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষেণে ১০ লাখ টাকা, পাম্পমটরের জন্য ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ মোট ২ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও কোনও কাজ না করে এই অর্থ অন্য কাজে ব্যয় দেখানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্পটির জন্য ১০৫ কোটি ১২ লাখ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে ছাড় করা হয়েছিল। এরমধ্যে ৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা অব্যয়িত দেখানো হলেও তা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি।

তদারকি সংস্থার প্রতিবেদনে সার্বিক অব্যবস্থাপনা গণপূর্ত বিভাগকে দায়ী করা হয়েছে।

তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে গণপূর্ত অধিদপ্তরের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আশরাফুল আলম তাদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন।

তিনি বলেন, “মূল ভবন নির্মাণ প্যাকেজে ইট, সিমেন্ট, রড দিয়ে ভবন নির্মাণ ছাড়া বাকি কাজ আলাদা আলাদা ছিল। তাই আমি ১৯টি প্যাকেজের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করেছি।”

এসময় নির্বাহী বিভাগের অনুমোদন ছাড়া অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রকল্পের প্রয়োজনে তা করতে হয়েছে।”

আইএমইডি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এলটিএম প্যাকেজের মাধ্যমে যেসব কাজ করা হয়েছে তা মূল ভবনের ব্যয়ের সঙ্গে একীভূত ছিল। 

সরকারের অনুমোদনহীন এ ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্পের সর্বশেষ পরিচালক বায়েজিদ খোরশেদ রিয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “প্রকল্পটির ফানির্চার ক্রয় ও সার্জিক্যাল ইক্যুপমেন্ট ছাড়া বাকি কাজ করেছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। কোনও অনিয়ম হয়ে থাকলে সে বিষয়ে তারাই জানাতে পারবে।”

প্রকল্প পরিচালকের দাবি, “প্রকল্পে কোনও অনিয়ম হয়নি।”

৪ কোটি ৬৫ লাখ অব্যয়িত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওই অর্থ কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।”

এসব বিষয়ে আইএমইডি সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার তদন্ত প্রতিনিধি দল সরেজমিন গিয়ে প্রকল্পটি পরীবিক্ষণ করে যা পাওয়া গেছে তাই ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগগুলো আমরা স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়কেও খতিয়ে দেখতে বলেছি। এখন তারা যদি তদন্ত করে আমাদের জানালে আমরা জানব।”