হত্যা বন্ধে রাষ্ট্রকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে: আনিসুজ্জামান

বাংলাদেশে শিক্ষকসহ চলমান সব হত্যাকান্ড বন্ধে রাষ্ট্রকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2016, 06:39 PM
Updated : 29 May 2016, 06:39 PM

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী খুনের প্রেক্ষাপটে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তনী’ ব্যানারে ‘ধারাবাহিক শিক্ষক হত্যাকাণ্ড: প্রতিবাদ ও স্মরণ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা আয়োজন করে।

সভার শুরুতেই নিহত শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নিহত ছয় শিক্ষকের আলোকচিত্রে আলোক প্রজ্জ্বলন করেও শ্রদ্ধা জানানো হয়।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের ছাড়াও অন্য সব হত্যাকাণ্ডের ধরন একই। হত্যার ধরন দেখে সন্দেহ করা যায়, একই গ্রুপ এসব হত্যার সঙ্গে জড়িত। আমাকে যে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, আমাকেও চাপাতি দিয়ে হত্যা করা হবে। কারণ চাপাতি দিয়ে হত্যা করা সহজ।

“হত্যাকাণ্ডের সময় তারা ধর্মের প্রসঙ্গকে সামনে নিয়ে আসে যে কে আস্তিক বা কে নাস্তিক। নাস্তিক হলেই তাকে হত্যা করতে হবে এবং তার বাক স্বাধীনতা বন্ধ করে দিতে হবে? মুক্ত চিন্তার দ্বার রুদ্ধ করে দিতে হবে?”

শুধু ‘নাস্তিক’ হওয়ার কারণে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে না পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তার সপক্ষে পীর, মাজারের খাদেম ও মসজিদের মুয়াজ্জিনকে হত্যার ঘটনাগুলো তুলে ধরেন প্রবীণ এই অধ্যাপক।

“এসব হত্যাকাণ্ড রোধে রাষ্ট্রকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। হতাকাণ্ডের বিচারের মাধ্যমে এসব ঘটনা প্রতিরোধ হবে কি হবে না, তা বড় বিষয় নয়। হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রয়োজন আছে। আমাদের যুদ্ধ করতে হবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য।”

এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ দেশজুড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, যে আদর্শের প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল, তা এখনও প্রতিষ্ঠা হয়নি।

“হিন্দু প্রধান বিচারপতি থাকতে পারবে না বা পাঠ্যবইয়ে হিন্দু লেখকদের লেখা থাকতে পারবে না বলে মৌলবাদীরা যে দাবি জানিয়েছে, পাকিস্তান আমলেও এরকম কথা বলা হয়নি।”

বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা থেকে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে মন্তব্য করে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, “এসব হত্যাকাণ্ডে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিই জড়িত। কারণ তারা পরাজিত হলেও একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়নি। লুকিয়ে থেকেই তারাই এসব হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

“তারা কোনো না কোনোভাবে রাষ্ট্রের ভিতরের শক্তি এবং বাইরের শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে উদ্বেগজনকভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।”

এসব হত্যাকাণ্ডের সম্মিলিত প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে সভায় বক্তব্য রাখেন বিশ্লেষক ও কলামনিস্ট অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক শহীদুজ্জামান।