শিক্ষক লাঞ্ছনা: ‘দায়সারা’ প্রতিবেদনে আদালতের উষ্মা

শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করে হাই কোর্ট বলেছে, ‘দায়সারা নয়’, আগামী ৮ জুনের মধ্যে তাদের আবারও ‘সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত’ প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2016, 09:07 AM
Updated : 29 May 2016, 10:52 AM

রাষ্ট্রপক্ষ রোববার নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসির দেওয়া প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করার পর বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেছে, “ডিসিসহ অন্যদের বলবেন, যেন দায়সারা গোছের প্রতিবেদন না দেয়। দায়সারা হলে আগামীতে এ রকম প্রতিবেদন গ্রহণ করা হবে না। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে কুণ্ঠিত হব না।”

বিষয়টি ৯ জুন আবারও আদালতে উঠবে জানিয়ে আদেশে বলা হয়েছে, হাই কোর্টের নির্দেশনার আলোকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে হবে।

“ডিসির দেওয়া কমপ্লায়েন্সে দেখা যায়, ওই ঘটনায় হাই কোর্টের নির্দেশ অনুসারে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে জানাতে জেলা প্রশাসক ব্যর্থ হয়েছেন। এ ধরনের মনোভাব অনুমোদনযোগ্য নয়।”

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখার দায়িত্ব যে জেলা প্রশাসকের, সে কথা শুনানিতে মনে করিয়ে দিয়েছে আদালত।

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ১৩ মে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে মারধর করে স্থানীয় একদল লোক। পরে তাকে কান ধরিয়ে উঠ-বস করান স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।

দেশজুড়ে ওই ঘটনার প্রতিবাদ ও দোষীদের বিচার দাবির মধ্যেই ওই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তার দুই দিনের মাথায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল পর্যদের ওই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে জানায়, প্রধান শিক্ষক তার পদে বহাল আছেন। নিয়ম বহির্ভূত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ওই স্কুল কমিটিকেও মন্ত্রণালয় বাতিল করে।  

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান ও মহসীন রশিদ ১৮ মে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন। এর প্রেক্ষিতে ওইদিন আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেয়।

সাংসদ সেলিম ওসমানসহ ওই ঘটনায় যাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। পাশাপাশি ওই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাও আদালত জানতে চায়।

আদেশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয় আদালত। এর ধারাবাহিকতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ২৬ মে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ওই প্রতিবেদনসহ নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসির দেওয়া প্রতিবেদন রোববার সকালে আদালতে তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেছিলেন যারা, সেই এম কে রহমান ও মহসীন রশিদও শুনানিতে অংশ নেন।

জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদন তুলে ধরার সময় মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ওই ঘটনার তদন্তের জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়। এর কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। এরপর জেলা কমিটির কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়।

নারায়ণগঞ্জ পুলিশের প্রতিবেদন তুলে ধরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ওই ঘটনার দিন বন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে তদন্ত চলছে। আগামী ৫ জুন বিষয়টি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উঠবে।

এছাড়া পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি তদন্ত কমিটি করে ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে, যা এখনও হাতে পাননি বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জানান।

শুনানির এক পর্যায়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে রুলে পক্ষভুক্ত হতে আবেদন তুলে ধরেন আইনজীবী আবু ওবায়দুর রহমান। আদালত তাকে মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে আসতে বলেন।