স্মার্টকার্ড: ‘এগোচ্ছে না’ কার্যক্রম, ইসিকে তাগাদা

প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ শেষ হয়ে প্রায় দেড় বছর গত হলেও নাগরিকদের উন্নতমানের পরিচয়পত্র স্মার্টকার্ডের বিতরণ কার্যক্রমই শুরু করতে পারেনি সরকার।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2016, 03:08 PM
Updated : 27 May 2016, 07:27 PM

বর্ধিত সময় আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে স্মার্টকার্ড বিতরণ শেষ করা যাবে কিনা তা নিয়েই দেখা দিয়েছে সংশয়।

নাগরিকদের ‘স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র’ দিতে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে ইসি। বছরের বিভিন্ন সময়ে ভোটার হওয়া নাগরিকদের মধ্যে তা বিতরণের পরিকল্পনার কথা সে সময় জানানো হয়।

প্রকল্পের মেয়াদের দুই তৃতীয়াংশ সময় পরও স্মার্ট এনআইডি বিতরণ শুরু করতে না পেরে গত বছরের শেষ ভাগে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও দেড় বছর।

অবস্থা যখন এমন, জরুরি ভিত্তিতে উৎপাদন ও বিতরণ কার্যক্রম নিতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে তাগাদা দিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।

১৯ মে অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মোহাম্মদ খালেদ-উর-রহমান ইসি সচিবকে এক চিঠিতে জানান, গত ১১ ও ১২ মে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে ‘ত্রিপক্ষীয় পর্যালোচনা বৈঠকে’ বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে ইসি সচিবালয়ের বাস্তবায়নাধীন ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিস’- আইডিইএ প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা হয়।

এতে বিশ্ব ব্যাংক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, ইসি সচিবালয় ও আইডিইএ প্রকল্পের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

চিঠিতে বলা হয়, “কিন্তু প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম জনগণের কাছে এনআইডি কার্ড বিতরণ শুরু করা সম্ভব হয়নি। ত্রুটিগত কারণে চার মাস কার্ড উৎপাদন বন্ধ ছিল এবং এ কারণে কার্ড বিতরণ কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে আলোচনায় প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন।”

সভায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্ড বিতরণ কার্যক্রম সফলভাবে শেষ করা নিয়ে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে।

এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রধান সাইফুল হক চৌধুরী তাগাদা দিয়ে এনআইডি উইং মহাপরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।

বিশ্ব ব্যাংক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা।

সার্বিক বিষয়ে অগ্রগতি জানতে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে আসছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রধান সাইফুল।

বিশ্ব ব্যাংকের ‘ইমপ্লিমেনটেশন রিভিও মিশন’ আগামী ৮ জুন থেকে ১৬ জুন আইডিইএ প্রকল্প নিয়ে ইসি সচিবের সঙ্গে বৈঠক সূচি রয়েছে।

গত বছরের জানুয়ারিতে স্মার্টকার্ড সংক্রান্ত চুক্তির পর থেকে নাগরিকদের হাতে ‘শিগগির’ তা বিতরণের আশ্বাস দিয়ে আসছে নির্বাচন কমিশন ও এর অধীন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ।

গত আগস্টে উৎপাদন শুরুর কথা বলা হলেও পরবর্তীতে কারিগরি ত্রুটির চার কার্ড উৎপাদন বন্ধের বিষয়টিও এতদিন ইসির কেউ জানাতে চাননি।

বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে গত ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিউদ্দীন আহমদ বলেন, “এটা বিশাল কর্মযজ্ঞ। তবে কখন বিতরণ শুরু হবে নির্দিষ্ট তারিখ দিতে পারব না।”

বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) সৈয়দ মুহাম্মদ মূসা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইডিইএ প্রকল্পের মূল কাজটাই হচ্ছে স্মার্টকার্ড উৎপাদন ও বিতরণ কার্যক্রম। আমরা মন্ত্রণালয়ের তাগাদা পেয়েছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা শেষ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”

ইতোমধ্যে গত দুই বছরে হালনাগাদ তালিকাভুক্ত ভোটারদের স্মার্টকার্ড উৎপাদন শেষ হয়েছে বলেও জানান তিনি।

“স্মার্টকার্ড সংক্রান্ত বিষয়ে ফ্রান্স সফরে রয়েছেন আমাদের মহাপরিচালক মহোদয়। ফ্রান্স থেকে ফেরার পর আগামী সপ্তাহে এ নিয়ে আমরাও পর্যালোচনায় বসব। আরও কিছু কার্ড ছাপানো শেষ হলে বিতরণের কাজও দ্রুত শুরুর প্রক্রিয়া নেওয়া হবে,” বলেন মুহাম্মদ মূসা।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ১০ কোটি ভোটারের মধ্যে মোটামুটি ৯ কোটির হাতে লেমিনেটেড এনআইডি রয়েছে। বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা পেতে এই জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।

কিন্তু সরকার নাগরিকদের হাতে ‘উন্নতমানের স্মার্টকার্ড’ দেওয়ার প্রকল্প নেওয়ায় বাকি এক কোটি ভোটারের হাতে পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়টি আটকে আছে।