ভোটের জন্য প্রস্তুত ৭২০ ইউপি

পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে; শুক্রবার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছেন ব্যালট পেপার, বাক্সসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2016, 05:35 AM
Updated : 27 May 2016, 05:35 AM

আগের চার ধাপের মতোই সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা ও নানা অভিযোগের মধ্যে শনিবার ৭২০ ইউপিতে তৃণমূলের এ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এরইমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় টহল শুরু করেছেন।

শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে। তিন হাজারের বেশি চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে প্রায় ৩০ হাজার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এ অনুষ্ঠানে।

ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে গত সাড়ে তিন মাসে নির্বাচনী সহিংসতায় আশি জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। সংঘর্ষ-হামলার ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিদিনই।

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটের দিন যত এগিয়ে আসে ততই গোলযোগের প্রবণতা বেড়ে যায়। কিছু কিছু অভিযোগও এসেছে আমাদের কাছে। সব বিষয়ে সজাগ রয়েছি আমরা। কেউ যেন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, গোলযোগের চেষ্টা না করে এবং দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে যাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়- সে বিষয়ে মাঠ কর্মকর্তাদেরও নির্দেশ দিয়েছি।”

ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি গুছিয়ে আনা হয়েছে জানিয়ে আগের চার ধাপের তুলনায় সুন্দর ভোটের প্রত্যাশার কথা জানান এই নির্বাচন কমিশনার।

“আমরা নিয়মিতই মাঠ পর্যায়ের সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজ খবর নিচ্ছি। গোলযোগ হতে পারে- এমন সব এলাকায় প্রশাসন ও পুলিশকে বিশেষ তদারকির জন্য তাগাদা দিয়েছি। এখন সবার সহযোগিতা পেলে আরও ভালো ভোট হবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিজানুর রহমান শেলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সহিংসতা ও অনিয়মের নেতিবাচক প্রভাব আগামীতেও পড়বে। আর তা হলে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ হারাবে মানুষ।

“ইসিকেই প্রমাণ করতে হবে যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট সম্ভব। মানুষের আস্থা অর্জনে ইসিকে এখনই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।”

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সুষ্ঠু ভোটের কোনো সম্ভাবনা তারা দেখছে না। তাদের ভাষায়, এখন ভোটের নামে ‘ডাকাতি’  চলছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে তাদের অভিযোগ জানিয়ে আসেন।

তিনি বলেন, ‘প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায়’ ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা ‘কেন্দ্র দখল করে’ জয় নিশ্চিত করছে। বারবার ইসিতে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচন ‘সুষ্ঠু হচ্ছে’ দাবি করে পাল্টা অভিযোগে বলেছে, বিএনপি এ ভোটকে ‘বিতর্কিত’ করতে ‘ষড়যন্ত্র’ করে আসছে।

পঞ্চম ধাপের ভোট তথ্য

>> ভোট ৪৪ জেলার ৮৬ উপজেলার ৭২০ ইউপিতে।

>> ভোটার ১ কোটি ১০ লাখের বেশি।

>> সাত হাজারের বেশি ভোট কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা হবে ভোট চলবে।

>> চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ২৫৪ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৭ হাজারের বেশি ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭ হাজারের বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

>> চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৪২ জন ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

>> এক লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেড় লাখের মতো সদস্য নিয়োজিত থাকছেন ভোটের দায়িত্বে।

এর আগে ২২ মার্চ, ৩১ মার্চ, ২৩ এপ্রিল ও ৭ মে বিক্ষিপ্ত গোলাযোগ আর অনিয়মের অভিযোগের মধ্য দিয়ে চারটি ধাপের ভোট হয়। তারপরও পরবর্তী দুই ধাপে ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে যাবেন বলে আশা করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।

পঞ্চম ধাপের ভোট সামনে রেখে সিইসি বলেছেন, সহিংসতা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে ইসি সজাগ রয়েছে।

“প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সমর্থকদের বলছি- ধৈর্য্য ধরেন। কারও মাথায় বাড়ি মেরে বা নিজেদের মধ্যে হানাহানির প্রয়োজন নেই।  আশা করি, চতুর্থ ধাপের তুলনায় আগামী দুই ধাপের নির্বাচন অনিয়ম ছাড়াই শান্তিপূর্ণ হবে,” বলেন কাজী রকিব।

সহিংসতা ও অনিয়ম ‘শূন্যের কোঠায়’ নামিয়ে আনতে ‘আরও কঠোর’ হবেন বলেও হুঁশিয়ার তিনি।

দল ও প্রার্থী

# পঞ্চম ধাপের ভোটে চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ২৫৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। এরমধ্যে মোট ১৫টি রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৭২৭ জন ও ১ হাজার ৫২২ জন লড়ছেন স্বতন্ত্র হিসেবে।

# দুটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই। বিএনপির প্রার্থী নেই ১০০ ইউপিতে।

 # দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছে ৭২৬ ইউপিতে, ৬২৯ ইউপিতে রয়েছে   বিএনপির প্রার্থী।

# এছাড়া জাতীয় পার্টি ১৭৭টি, জাসদ ২১টি, বিকল্পধারা দুটি, ওয়ার্কার্স পার্টি ১৩টি, ইসলামী আন্দোলন ১২২টি, জেপি দুটি, ইসলামী ফ্রন্ট ১১টি, এলডিপি ছয়টি, সিপিবি পাঁচটি, জেএসডি একটি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ছয়টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট সাতটি এবং অপর একটি দল এক ইউপিতে প্রার্থী দিয়েছে।

# তফসিল ঘোষণার পর নানা  কারণে এ পর্যন্ত ১৪টি ইউপির ভোট স্থগিত করা হয়েছে।

ছয় ধাপের এ ভোটের জন্য গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণা হয়। শনিবার পঞ্চম ধাপের পর  ৪ জুন ষষ্ঠ ধাপে প্রায় দেড় হাজার ইউপিতে ভোটের মধ্য দিয়ে এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।

চার ধাপের ফল: আ. লীগ ১৮৩৬, বিএনপি ২৪৩

স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে তৃণমূলের এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে, প্রথম ধাপে ৭৪ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৭৮ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৭৬ শতাংশ ও চতুর্থ ধাপে ৭৭ শতাংশ ভোট পড়েছে।

>> প্রথম ধাপের চূড়ান্ত ফলে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান হয়েছেন ৪৯৪ জন ও বিএনপির ৫০ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ১০৯ ইউপিতে। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ৫৪ জন।

>> দ্বিতীয় ধাপে নৌকা প্রতীকের ৪১৯ জন ও ধানের শীষের ৬৩ জন বিজয়ী হন। ১১৭ ইউপিতে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এ ধাপে আওয়ামী লীগের ৩৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

>> তৃতীয় ধাপের ভোটে আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান হয়েছেন ৩৬৬ জন; বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২৯ জন। এ ধাপে বিএনপি প্রার্থীরা ৬০টি ইউপিতে জয়ী হয়েছেন; স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ১৩৯ ইউপিতে।

>> চতুর্থ ধাপে নৌকা প্রতীকের ৪০৫ জন জয়ী হয়েছেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ৩৫ জন। বিএনপির ৭০ জন ও ১৬১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন এ ধাপে।