পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো শহরের একটি ঢাকা: আনিসুল

রাজধানীতে জীবন যাত্রার মান নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা থাকলেও তা মানতে নারাজ এর বড় অংশ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2016, 06:37 PM
Updated : 25 May 2016, 06:37 PM

বুধবার গুলশান-বারিধারাসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকার নিরাপত্তায় ৬৪২টি সিসিটিভি ক্যামেরা কার্যক্রম উদ্বোধন করে তিনি বলেন, “বিদেশিরা বলে বাংলাদেশের এই ঢাকা শহর সবচেয়ে খারাপ শহর। পৃথিবীর নাকি সবচেয়ে খারাপ শহরের একটি ঢাকা।

“আশ্চর্য লাগে আমার কাছে। আমি মনে করি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো শহরের একটি হচ্ছে ঢাকা।”

বিকালে গুলশানের ইয়ুথ ক্লাবের মাঠে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে ঢাকাকে ভালো শহর হিসেবে দাবি সপক্ষে বিশ্বের কয়েকটি শহরের জনসংখ্যা ও আয়তনের সঙ্গে রাজধানীর জনসংখ্যা ও আয়তনের তুলনা করেন ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল।

“মেক্সিকো সিটি ১৪৮৫ বর্গ কিলোমিটার, বাসিন্দা ৮৯ লাখ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫ হাজার ৯৯৫ জনের বসবাস। সিঙ্গাপুর সিটিতে মাত্র ৫৫ লাখ লোক, ৭১৯ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাস করে। সাত হাজার ৬৯৭ জন লোক প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে।

“সবাই বলে ক্যানবেরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শহর, অথচ ওখানে মানুষই নাই। ক্যানবেরার আয়তন ৮১১ বর্গকিলোমিটার। সেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪২৮ জন লোক বাস করে। টোকিও দুই হাজার ১৮৩ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখের মতো। প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র ৬ হাজার ২০০ লোক বাস করে।”

আনিসুল হক বলেন, ‍“আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মাত্র ৮৩ কিলোমিটার, ঢাকা দক্ষিণ মাত্র ৪৩ বর্গ কিলোমিটার। যেখানে টোকিওতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ছয় হাজার লোক বাস করে, সেখানে ঢাকা উত্তরে এক লাখ ৩২ হাজার ৫৩০ জন (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে) মানুষ বসবাস করে।

“এই হলো ঢাকা শহর। এই শহরকে রাতারাতি খারাপ বলা ঠিক হবে না। ৩৫ ভাগ জিডিপি গ্রোথ করে এই শহর। এজন্য ঢাকা বিশ্বের সেরা শহর। এর পরিচালকরাও সেরা।”

সিসি ক্যামেরা উদ্বোধন নিয়ে মেয়র বলেন, নগরবাসীর নিরাপত্তায় তিন বছর আগে গুলশান, বারিধারা, বনানী এলাকার বাসিন্দা, পুলিশ প্রশাসন ও নগর কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে সিসিটিভি বসানোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল- এখন তা বাস্তবে রূপ নিল।

“প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মে মাসের মধ্যেই ৬৪২টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আরও ৫০০ ক্যামেরা বসে যাবে আগামী এক মাসের মধ্যে। এর আশপাশের এলাকায়ও দুই থেকে আড়াই হাজার ক্যামেরা বসানো হবে।”

নাগরিক সেবার মান বাড়াতে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, যারা প্রয়োজনে হাত বাড়িয়ে দেয় তারাই প্রকৃত স্বজন। সবাই মিলে এক সাথে কাজ করলে কোনো কাজই কঠিন হবে না।

“যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তার প্রত্যেকটি কাজে হাত দিয়েছি, সবার সহযোগিতা থাকলে বাকি কাজ শেষ করতে চার বছরও লাগবে না। চার বছর পর এই ঢাকাকে চেনা যাবে না।”

ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিতে এসে মেয়র হওয়া আনিসুল হক আরও বলেন, “এটা সত্যি যে মেয়রের কাজ শুধু লাইট জ্বালানো আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দেখাশোনা করা, কিন্তু আমরা এর মাঝে সীমাবদ্ধ থাকিনি। নাগরিক সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে একটা একটা করে এর সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি”

উন্নয়ন কাজের কারণে নগরবাসীর ভোগান্তির বিষয়ে সবাই সাময়িক কষ্ট সহ্য করার অনুরোধ জানান ঢাকা দক্ষিণের এই মেয়র।

‘ডিএনসিসি অ্যাপ’ উদ্বোধন

অভিযোগ ও পরামর্শ গ্রহণের জন্য ডিএনসিসি চালু করতে যাচ্ছে একটি ‘অত্যাধুনিক মোবাইল অ্যাপ’, যাতে মাত্র দুটি ক্লিকেই স্বচিত্র অভিযোগ করতে পারবেন নগরবাসী।

বুধবার ৬৪২টি সিসিটিভি ক্যামেরার উদ্বোধনীতে ‘ডিএনসিসি অ্যাপ’ নামে এই মোবাইল অ্যাপের উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনীতে ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক বলেন, “ঢাকা শহরকে নিয়ে গত এক বছরে ২৬ লাখ ৯০ হাজার কমিউনিকেশন পেয়েছি; অভিযোগ ও পরামর্শ পেয়েছি, প্রশংসাও শুনেছি।

“এখন একটি স্মার্ট মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে নাগরিকরা এই কাজটি করতে পারবেন। মাত্র দুইটি ক্লিকে আমাদের কাছে অভিযোগ পৌঁছে যাবে।”

অ্যাপটি উদ্বোধন করা হলেও আগামী ৬ জুলাই থেকে তা মোবাইল ফোনে চালু করা যাবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

তারা বলছেন, ঢাকার কোনো একটি স্থানের ছবি তুলে এই অ্যাপসে পাঠালে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ পৌঁছে যাবে।এমন কি প্রযুক্তির মাধ্যমে কোন স্থানের ছবি সেটাও চিহ্নিত করা যাবে।

অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, পুলিশের আইজি একেএম শহিদুল হক, র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও দর্শক সারিতে ছিলেন।