১৩ বছর বিনা বিচারে বন্দি জবেদকে কেন ক্ষতিপূরণ নয়: হাই কোর্ট 

উচ্চ আদালতের খালাসের রায়ের ১৩ বছর পর মুক্তি পাওয়া সাতক্ষীরার জবেদ আলী বিশ্বাসের ‘মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হওয়ায়’ কেন তাকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে হাই কোর্ট।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2016, 06:49 AM
Updated : 24 May 2016, 01:00 PM

এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রুল দেয়।

পাশাপাশি, জবেদ আলীকে ‘বেআইনিভাবে’ কারাবন্দি রাখায় বিবাদীদের ‘নিষ্ক্রিয়তা ও অবহেলা’ কেন সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৩৫ ও ৩৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন সচিব, হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২ এর তৎকালীন বিচারক, আইজি প্রিজন ও সাতক্ষীরার জেল সুপারকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

‘খালাসের রায়ের ১৩ বছর পর কারামুক্ত হলেন জবেদ আলী’ শিরোনামে গত ৩ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে চিলড্রেনস চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন গত ১৯ মে  এই রিট আবেদন করে।

খালাসের পরও ১৩ বছর বিনাবিচারে আটক রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ক্ষতিপূরণের জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয় ওই রিট আবেদনে, যা মঙ্গলবার শুনানির জন্য ওঠে।

রিট আবেদনকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল হালিম নিজেই আদালতে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

আবদুল হালিম পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিম্ন আদালত ২০০১ সালে এক মামলায় জবেদ আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। জবেদ আলীর করা আপিলে ২০০৩ সালে হাই কোর্ট তাকে খালাস দেয়।

কিন্তু সাতক্ষীরার তখনকার অতিরিক্ত দায়রা জজ খালাসের আদেশ কারাগারে না পাঠানোয় জাবেদের মুক্তি আটকে থাকে ১৩ বছর। চলতি বছর ২ মার্চ তিনি মুক্তি পেলে বিষয়টি খবরের শিরোনামে আসে।

সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৩৫ ও ৩৬ অনুচ্ছেদের মৌলিক অধিকাল লঙ্ঘন হয়েছে দাবি করে এই রিট আবেদন করা হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী।

সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইনের আশ্রয় পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের অবিচ্ছেদ্য অধিকার। আইনের বাইরে গিয়ে এমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, যাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।

আইন বহির্ভূতভাবে কাউকে তার জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না, বলা হয়েছে ৩২ অনুচ্ছেদে।

সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে দণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ, বিচার পাওয়ার অধিকার, জবানবন্দি গ্রহণ ও নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়ার বিষয়ে বিধিনিষেধ সম্পর্কে বলা হয়েছে।

আর ৩৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে নাগরিকদের চলাফেরা, বসবাস ও দেশত্যাগ বা দেশে ফেরার অধিকারের বিষয়ে।

জবেদ আলীর ১৩ বছর

মামলার নথির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কয়লা গ্রামের আমজেল বিশ্বাসের ছেলে জবেদ আলী বিশ্বাসের স্ত্রী ফরিদা খাতুনের মৃত্যুর পর তাদের দুই মেয়ে লিলি (৮) ও রোকসানাকে (৫) তালা উপজেলার মানিকহার গ্রামে তাদের মামা আবুল কাসেমের বাড়িতে থাকত।

১৯৯৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জবেদ আলী শ্যালকের বাড়িতে বেড়াতে গেলে ওই দিনই লিলির মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় লিলিকে বিষ খাইয়ে হত্যার অভিযোগে তার বাবা জবেদ আলীর বিরুদ্ধে তালা থানায় মামলা করেন কাসেম।

পরদিন পুলিশ জবেদকে গ্রেপ্তার করে এবং তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

সাতক্ষীরা জেলা আদালতের আইনজীবী জিল্লুর রহমানকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সিরাজুল ইসলাম ২০০১ সালের ১ মার্চ জবেদ আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে জবেদ আলী হাইকোর্টে আপিল করেন এবং ওই বছরের ১১ মে  তাকে সাতক্ষীরা কারাগার থেকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

২০০৩ সালের ১৯ মার্চ হাই কোর্ট জবেদ আলীকে নির্দোষ ঘোষণা করে বেকসুর খালাস দেয়। ২৬ মার্চ হাই কোর্ট থেকে খালাসের আদেশ সাতক্ষীরার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে পৌঁছায়।

সংবাদমাধ্যমে আসা খবরে বলা হচ্ছে, সাতক্ষীরার তৎকালীন অতিরিক্ত দায়রা জজ হাই কোর্টের ওই আদেশ কারাগারে না পাঠিয়ে আদালতের রের্কডরুমে সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। রায়ের ১৩ বছর পর গত ২ মার্চ কারাগার থেকে মুক্ত হন জবেদ আলী বিশ্বাস (৫৯)।