ঢাকার হাসপাতালে পরিবার নিয়ে শঙ্কায় শিক্ষক শ্যামল কান্তি

নারায়ণগঞ্জে মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার স্কুলশিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ঢাকা মেডিকেলের বিছানায় শুয়ে পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

তপন কান্তি রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2016, 03:03 PM
Updated : 20 May 2016, 03:16 PM

উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর এক ফাঁকে তার সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

এক মেয়েকে বাসায় রেখে বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে রেখে এসেছেন জানিয়ে তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন তিনি।

শ্যামল কান্তি যখন একথা বলেন প্রায় কাছাকাছি সময় নারায়ণগঞ্জে সমাবেশ করে এই শিক্ষকের শাস্তি দাবি করেছে হেফাজতে ইসলাম, যদিও তাকে লাঞ্ছনায় নারায়ণগঞ্জের সাংসদ সেলিম ওসমানসহ অন্যদের শাস্তি দাবিতে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি চলছে।

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার লতিফ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে একদল লোক মারধোর করে। পরে তাকে কান ধরিয়ে উঠ-বস করান স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।

এতোদিন নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন শ্যামল কান্তি। দুপুরে পুলিশ পাহারায় তাকে ঢাকায় আনা হয়। ঢাকা মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের ৬০১ নম্বরে ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। তার সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী সবিতা রানী।

শ্যামল কান্তির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সাংবাদিকদের তার কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না।

পরীক্ষার জন্য ওয়ার্ড থেকে সিসিইউতে নেওয়ার সময় লিফটে শ্যামল কান্তির সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

তিনি বলেন, “চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছি, বর্তমানে ভালো নেই। এখনও ঠিক হই নাই, শরীরে সমস্যা আছে। বেশ সমস্যা আছে।

“আমাকে প্রচণ্ড প্রহার করা হয়েছে, যাকে বলে ‘চাপা মার’। মানুষকে ‘চাপা মার’ দেয় না, সেই রকম মার দিয়েছে। আমার বুকে পাড়াইছে, দুই হাটুতে ইট দিয়ে মারছে যাতে ব্লাড বের না হয়। ইটের বাঁকা অংশ দিয়ে মাথার বাঁ পাশে জোরে আঘাত করছে।”

হামলাকারী কাউকে চিনতে পেরেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি তখন জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়েছিলাম। ওরা ২০-৩০ জন লোক আমাকে মারতে শুরু করে, কে বা কারা ছিল আমি দেখতে পারিনি। আমি শুধু দুচোখে হাত দিয়ে বাঁচার জন্য চিৎকার করছিলাম, আমার নাক মুখ চোখে যাতে কিছু না হয়ে যায়। তারপরে ওরা আমার বুকে লাথি মারে আমাকে ফেলে দেয়।”

সিসিইউতে শ্যামল কান্তি ভক্তকে দেখানো হয় একজন হৃদরোগ চিকিৎসককে।

সেখান থেকে বের করার পর আবার লিফটে উঠার আগে শ্যামল কান্তি বলেন, “আমি এখানে আছি, কিন্তু আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় আছে। মেঝো মেয়েকে বাসায় রেখে বাইরে থেকে তালা মেরে এসেছি। আল্লাহ জানে কী হবে।

“আমি যুদ্ধ করে দেশে স্বাধীন করেছি। মৃত্যুকে ভয় করি না। কিন্তু পরিবারের জন্য ভয় হচ্ছে।”

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের যে অভিযোগ তুলে তাকে মারধর করা হয় তা অস্বীকার করেন এই শিক্ষক।

তিনি বলেন, “আপনারা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন, আমার দোষ কী? আমার ছাত্র পত্রিকায় বলেছে যে, স্যার এরকম কিছুই বলেননি। সে পত্রিকা স্কুলের অফিসে আছে। শিক্ষামন্ত্রী তদন্ত করেছেন।”

এ সময় তার স্ত্রী সবিতা রানী বলেন, “ওই দিনের ঘটনা আমরা কিছুই জানি না। শুধু জানি যে তাকে আটক করা হয়েছে। মারধর করা হচ্ছে শুনেছি। স্কুল কমিটি জোর করে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগের স্বাক্ষরের জন্য জোর করেছিল, তিনি রাজি ছিলেন না।

“মূলত সহকারী প্রধান শিক্ষক মোবারককে প্রধান শিক্ষক করার জন্য এটা করা হয়েছিল। মোবারকের সঙ্গে আগে থেকে উনার ঝামলা চলছিল।”

সিসিইউ থেকে জরুরি বিভাগের এক্স-রে কক্ষে নিয়ে তার বুকের এক্স-রে করানো হয়। পরে সিটি স্ক্যান শেষে বিকালে সাড়ে ৪টার দিকে আবার মেডিসিন ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয় শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে।

ওই ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক সুমন প্রামানিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিক্ষক শ্যামল কান্তির রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে ও সিটি স্ক্যান করা হয়েছে।

“টেস্টের রিপোর্টগুলো সব এখনও এখানে আসেনি। আসলেই বোঝা যাবে উনি কী অবস্থায় আছেন।”

তবে বুকে কোনো সমস্যা হয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা।

এ বিষয়ে শ্যামল কান্তির সঙ্গে কথা বলতে গেলে শাহবাগ থানার এস আই মিজানুর বাধ সাধেন।

“স্যারের সাথে কথা বলা যাবে না,” বলেন তিনি।