শিক্ষক লাঞ্ছনার রিপোর্ট পেলেই অ্যাকশন: শিক্ষামন্ত্রী

নারায়ণগঞ্জে শিক্ষককে কান ধরিয়ে উঠ-বস ‘কলঙ্কজনক’ মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, এ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2016, 09:29 AM
Updated : 18 May 2016, 11:31 AM

দেশজুড়ে আলোচিত এই ঘটনা তদন্তে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটি বুধবারের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন।

তবে তদন্ত কমিটির প্রধান মাউশির ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক মো. ইউসুফ আলী মঙ্গলবার কাজ শুরুর পর বলেছিলেন, তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও তাদের আরও সময়ের প্রয়োজন।

সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ওই প্রধান শিক্ষককে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কান ধরিয়ে উঠ-বস করার ঘটনাটি নিয়ে সমালোচনা চলছে সারাদেশে।

বিষয়টি নজরে আসার পর বুধবার হাই কোর্ট স্বতপ্রণোদিত এক আদেশে এই ঘটনার জন্য সংসদ সদস্যসহ অন্যদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছে।

বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রী নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাউশি মিলে আমরা একটা কমিটি করে দিয়েছি। সেই কমিটি গত রাতে সমস্ত রাত কাজ করে ফিরে এসেছে।

“ফিরে এসে রিপোর্ট দেওয়ার সাথে সাথে আমরা বসব। রিপোর্ট দেওয়ার সাথে সাথে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।”

পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে মারধর ও কান ধরে উঠ-বস করানোর ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির সদস্যরা মঙ্গলবার অনেক রাত পর্যন্ত ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন।

মাউশি’র মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেখান থেকে যেসব তথ্য পেয়েছে তা যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন তৈরি করবে। এরপর আমরা জানাব।”

কমিটির প্রধান ইউসুফ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন।

প্রাথমিক তদন্তে কী জানা গেছে, সে বিষয়ে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

“বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের সঙ্গে কমিটি কথা বলেছে। তাদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলা হবে। প্রয়োজনে আরও অনেকের বক্তব্য নেওয়া হবে।”

স্থানীয়দের সাক্ষ্য নিচ্ছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা

তদন্ত শেষ করতে সময় বাড়ানোর আবেদন করা হবে বলে আগের দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন তিনি।

দেশজুড়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ এবং দোষীদের বিচার দাবির মধ্যে মঙ্গলবার উল্টো প্রধান শিক্ষক শ্যামলকে চাকরিচ্যুত করে ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা করি নাই, করতেও বলি নাই, না করতেও বলি নাই। তদন্ত (কমিটি) এই জন্যই করা হল।

“যে কোনো বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে গেলে আমাদের নিয়ম-নীতি, বিধি-বিধান অনুসরণ করে না করলে সেটা আপনারাই চ্যালেঞ্জ করবেন। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দ্রুতই চলে আসবে বলে আমরা আশা করছি। আসার সাথে সাথে পদক্ষেপ নেব... আবার বললাম, রিপোর্টটা আসলে আমরা অ্যাকশন নিব।”

নীল পাঞ্জাবি পরা এ কে এম সেলিম ওসমান নির্দেশ দিচ্ছেন ওই স্কুল শিক্ষককে কান ধরে উঠ-বস করতে

এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “এখানে কে কী করেছে, সেটাও আমরা ধরব।”

ঘটনার ভিডিওতে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে কান ধরে উঠ-বস করতে নির্দেশ দিতে দেখা যায়। তবে তার দাবি, জনরোষ থেকে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন তিনি।  

এ ঘটনার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘জোরালো ভূমিকা নেয়নি’ বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা নাকচ করেন নাহিদ।

“আমরা জোরালো বক্তব্য দিয়েছি। আমি এখনও উল্লেখ করছি, অতি নিন্দনীয়, সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য, আমাদের সকলের জন্য এটা একটা কলঙ্কজনক ঘটনা। একজন শিক্ষকের প্রতি এমন আচরণ কখনও হতে পারে না।”

এর আগেও বিভিন্ন সময় শিক্ষক লাঞ্ছনার অনেক ঘটনায় বিচার না হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “এই সমাজে অপরাধ বা এই ধরনের কার্যক্রম আছে। আমরা সমাজ থেকে আলাদা দ্বীপ না। সমাজেই বসবাস করি। এই ধরনের বিষয়গুলো শিক্ষা পরিবারে নানাভাবে ঘটে।

নুরুল ইসলাম নাহিদ (ফাইল ছবি)

“কুষ্টিয়াতে একজন হেডমাস্টার অন্য শিক্ষিকার ওপর নির্যাতন করেছেন, আমি সেই বিষয়ে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি। সকালে আবার ডিসির সাথে কথা বলেছি। সেই হেডমাস্টারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। মামলা করা হয়েছে। সেই মহিলাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”

প্রতিদিন সংবাদপত্র পর্যালোচনা করে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থা নিতে বলা হয় জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “তার মানে এই নয় যে, আমরা সব ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে পারি। যেগুলো ফৌজদারি ব্যাপার, সেগুলো কোর্টে যেতে হয়। করি সবই।

“সমাজের থেকে আমরা আলাদা না। সমাজের মতো ঘটনা এখানে ঘটে। আমরা যথাসম্ভব এগুলোকে অ্যাড্রেস করি। বিধি-বিধান মেনে সিদ্ধান্ত না নিলেতো সেটাকে টিকিয়ে রাখতে পারব না।”

নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “পোক্ত করে সিদ্ধান্ত নিতে যেটুকু দরকার, সেটুকু সময় নিয়েছি। বেশি সময় নিইনি। আমরা রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি।”