নিজামীর ফাঁসি যে অপরাধে

যুদ্ধাপরাধের যে তিন অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলতে হলো, তার মধ্যে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন ও গণহত্যা রয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2016, 06:14 PM
Updated : 12 May 2016, 08:04 PM

নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন আপিল বিভাগ খারিজ করে দেওয়ার পর সব বিচারিক ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে বুধবার প্রথম প্রহরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একাত্তরের ঘাতক বাহিনী আল-বদর প্রধানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

প্রায় দুই বছর আগে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মানবতাবিরোধী চারটি অভিযোগে নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে নিজামীর করা আপিল আংশিক মঞ্জুর করে সেই চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি ফাঁসির দণ্ডই বহাল রাখে সর্বোচ্চ আদালত।

এর মধ্যে পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে পাবনার বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে হত্যা ও ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ; পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা এবং পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল রাখা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে ৪ নম্বর অভিযোগে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড হলেও আপিল বিভাগ ওই অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছে। 

ফাঁসির তিন অপরাধ

অভিযোগ ২: একাত্তরের ১০ মে বেলা ১১টার দিকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়ি গ্রামের রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সভা হয়। স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের উপস্থিতিতে ওই সভায় নিজামী বলেন, শিগগিরই পাকিস্তানি সেনারা শান্তি রক্ষার জন্য আসবে। ওই সভার পরিকল্পনা অনুসারে পরে ১৪ মে ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে সেদিন ধর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা।

অভিযোগ ৬: নিজামীর নির্দেশে ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে যায় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা। তারা গ্রামের ডা. আব্দুল আউয়াল ও তার আশপাশের বাড়িতে হামলা চালিয়ে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা করে।

অভিযোগ ১৬: মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের ঊষালগ্নে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে আলবদর বাহিনী। দেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণিকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে আলবদর সদস্যরা ওই গণহত্যা ঘটায়। জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওই গণহত্যার দায় নিজামীর ওপর পড়ে।