‘উদ্বেগ’ নিয়ে ৭০৩ ইউপিতে ভোটের অপেক্ষা

অনিয়মের অভিযোগ ও সহিংসতার মধ্যে ‘তুলনামূলক ভালো’ নির্বাচনের আশায় চতুর্থ ধাপের ৭০৩ ইউনিয়ন পরিষদের ভোট হচ্ছে শনিবার।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2016, 04:56 PM
Updated : 6 May 2016, 04:56 PM

বরাবরের মতোই সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে। ৪৭ জেলার ৮৮ উপজেলার সাত শতাধিক নির্বাচনী এলাকায় ঘোষণা করা হয়েছে সাধারণ ছুটি।

ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমরা টহলে রয়েছেন; ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে ভোটের অপেক্ষায় প্রস্তুত।

“সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। আশা করছি, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হবে। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে যাবেন এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিরাপদে ফিরবেন। এখন ইসির সার্বিক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি অংশীজনের সহায়তাও থাকতে হবে।”

এবারের ছয় ধাপের নির্বাচনে তিন ধাপের ভোট শেষ হয়েছে গত ২৩ এপ্রিল। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ইউপি ভোটের তফসিল ঘোষণার পর থেকে সংঘাত-সহিংসতায় প্রাণ গেছে অন্তত ৭০ জনের।

এ পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ-জানিপপ চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিশন এখন নড়েচড়ে বসছে। কিন্তু আমাদের উদ্বেগ হচ্ছে সহিংসতা নিয়ে। ভোট কেন্দ্র করে কোনো ধরনের সহিংসতা কাম্য নয়। সহিংসতা যাতে না হয়- তা ইসি ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে নিশ্চিত করতে হবে।”

এবার প্রথমবারের মতো দলভিত্তিক ইউপি নির্বাচন হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোকেও এর দায় নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

“সহিংসতা রোধে দলগুলোকেও সহিষ্ণু মনোভাব দেখাতে হবে। প্রথম ধাপে সহিংসতা কম হলেও দ্বিতীয় ধাপে তা বেড়েছে। তৃতীয় ধাপে অনেকটা কমেছে। চতুর্থ ধাপে এ বিষয়ে জিরো টরালেন্স দেখাতে হবে। এটা কথায় নয়, কাজে প্রমাণ দিতে হবে সবাইকে,” বলেন জানিপপ চেয়ারম্যান।

চতুর্থ ধাপের ভোট তথ্য

>> ভোট ৪৭ জেলার ৮৮ উপজেলার ৭০৩ ইউপিতে।

>> ভোটার ১ কোটি ১০ লাখের বেশি।

>> ছয় হাজার ৭২৭টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা হবে ভোট চলবে।

>> চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ২৪৫ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৪ হাজার ১৮৭ জন, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭ হাজার ১৫৯ জন প্রার্থী।

>> চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৩৫ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২২৭ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৯৮ জন ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

>> এক লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেড় লাখের মতো সদস্য নিয়োজিত থাকবেন ভোটের দায়িত্বে।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এ নির্বাচন ‘সুষ্ঠু হচ্ছে’ দাবি করলেও ভোটকে ‘বিতর্কিত করতে ষড়যন্ত্র’ করার অভিযোগ এনেছে বিএনপির বিরুদ্ধে।

অন্যদিকে ভোট জালিয়াতির অভিযোগের পাশাপাশি সহিংসতার জন্য ক্ষমতাসীন দলকে দায়ী করে বিএনপি বলে আসছে- এ নির্বাচন ‘অর্থহীন’।

ইউনিয়ন পরিষদের চতুর্থ দফার ভোট সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিএনপি প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর ‘হামলা করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেছেন, “আগের মতোই ক্ষমতাসীনরা সহিংসতা ও সন্ত্রাস চালাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার নেই।”

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ‘কাঁধে ভর করে’ বিএনপি গোলযোগ সৃষ্টির ‘পাঁয়তারা’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলছেন, সহিংসতা ও অনিয়ম ‘শূন্যের কোঠায়’ আনতে ‘আরও কঠোর’ হবেন তারা।

“রাজনৈতিক দলের কর্মীদের অসহিষ্ণুতার কারণে সহিংসতা ঘটছে। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। আগের তুলনায় এবার ইতিবাচক পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। আশা করি, আগামী নির্বাচনগুলো কোনো ধরনের গোলযোগ ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ভোট হবে।”

দল ও প্রার্থী

# চতুর্থ ধাপের ভোটে চেয়ারম্যান পদে মোট ১৬টি রাজনৈতিক দলের ৩ হাজার ২৪৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। ১ হাজার ৫২২ জন লড়ছেন স্বতন্ত্র হিসেবে।

# চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট ইউপিতে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই। বিএনপির প্রার্থী নেই ১০৬ ইউপিতে।

# দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৭২৪ জন, বিএনপির ৬১৯ জন, জাতীয় পার্টির ১৫৬ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদের ৪২ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৯ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ১৫৪ জন, জাতীয় পার্টি- জেপির ৩ জন, তরিকত ফেডারেশনের ২ জন, এনপিপির ১ জন, সিপিবির ১ জন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ৪ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ২ জন, বিএনএফ এর ২ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ২ জন, ইসলামী ঐক্যজোটের একজন ও অন্য দল একজন রয়েছেন।

# তফসিল ঘোষণার পর আদালতের নির্দেশনা ও নানা অভিযোগের কারণে এ পর্যন্ত ২২টি ইউপির ভোট স্থগিত করা হয়েছে।

ইউপি নির্বাচন ঘিরে এ পর্যন্ত একজন এসপি, অন্তত ১০ জন ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একজন সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা, একজন উপজেলা চেয়ারম্যান ও একজন মেয়রকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একজন এসপি ও পাঁচজন ওসিকে তলব করেছে ইসি। একজন সাংসদকে এলাকা ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বলেন, “ইতোমধ্যে নেওয়া বিভিন্ন ব্যবস্থার কারণে শনিবারের ভোট অপেক্ষাকৃত ভালো হবে বলে আশা করছি। ভোট সামনে রেখে সব ধরনের নির্দেশনা ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে।”

ছয় ধাপের এ ভোটের জন্য গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণা হয়। ৪ জুন ষষ্ঠ ধাপের ভোটের মধ্য দিয়ে এ নির্বাচন শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।  

তিন ধাপে আ. লীগ ১৩৯৬, বিএনপি ১৭৩

স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে তৃণমূলের এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে, প্রথম ধাপে ৭৪ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৭৮ শতাংশ ও তৃতীয় ধাপে ৭৬ শতাংশ ভোট পড়েছে।

>> প্রথম ধাপের চূড়ান্ত ফলে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান হয়েছেন ৪৯৪ জন ও বিএনপির ৫০ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ১০৯ ইউপিতে। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ৫৪ জন।

>> দ্বিতীয় ধাপে নৌকা প্রতীকের ৪১৯ জন ও ধানের শীষের ৬৩ জন বিজয়ী হন। ১১৭ ইউপিতে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এ ধাপে আওয়ামী লীগের ৩৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

>> তৃতীয় ধাপের ভোটে আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান হয়েছেন ৩৬৬ জন; বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২৯ জন। এ ধাপে বিএনপি প্রার্থীরা ৬০টি ইউপিতে জয়ী হয়েছেন; স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ১৩৯ ইউপিতে।