আগের প্রক্রিয়ায় নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: আইনমন্ত্রী

যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ হওয়াকে ‘একাত্তরের ঋণ শোধের আরেকটি ধাপ’ বলে মনে করছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2016, 01:08 PM
Updated : 5 May 2016, 01:08 PM

তিনি বলেছেন, এর আগে চার যুদ্ধাপরাধীর সাজা কার্যকরে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল, জামায়াতে ইসলামীর আমির নিজামীর ক্ষেত্রেও তাই করা হবে।

বৃহস্পতিবার রায়ের পর নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের পর ‘বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি’ ছিল, তা থেকে ধীরে ধীরে দেশ ‘আইনের শাসনের সংস্কৃতিতে’ ফিরে যাচ্ছে, যার ‘প্রমাণ’ এই রায়।

“আমরা চিরকালই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং দেশ স্বাধীন করার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের কাছে ঋণী থাকব। কিন্তু ঋণ শোধ করার জন্য কিছু কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়। আজকের এই বিচার কাজে নিজামীর এই শাস্তির শেষ ধাপের রায় আমরা পেয়েছি। ঋণ শোধের প্রক্রিয়ায় আমরা আজ কিছুটা হলেও ভারমুক্ত।

একাত্তরের হত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবী গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একাত্তরের বদর প্রধান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের যে রায় আপিল বিভাগ দিয়েছিল, তা পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছিলেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার তা খারিজ করে দিলে এই যুদ্ধাপরাধ মামলার সব বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

নিজামী একাত্তরে ছিলেন দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত আল বদর বাহিনীর প্রধান। তার পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নেতৃত্বেই আলবদর বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছিল বলে এ মামলার বিচারে প্রমাণিত হয়েছে।

আনিসুল হক বলেন, “সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে, আমার বয়স ৬০ বছর। আমি (একাত্তরের ঘটনাপ্রবাহ) দেখেছি। রায়গুলো ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত ইমোশনাল ব্যাপার।

“১৯৭১ সালে এদের দাম্ভিকতা, আচার-ব্যবহার, দা অডাসিটি অ্যান্ড দ্য ওয়ে দে বিহেভ.. সেই সবগুলোর বিচার হয়ে সাজা হচ্ছে, সেটা দেখতেও খুব ভালো লাগে।”

আইনমন্ত্রী বলেন, এই রায়ের ফলে বিচারপ্রার্থীরা এই আশ্বাস পাবেন যে, অপরাধ করে কেউ বিচারের আওতার বাইরে থাকবে না।

“অপরাধ করলে শাস্তি হবেই। এটাই হচ্ছে আইনের শাসনের সবচেয়ে বড় মাপকাঠি। সার্বিক বিবেচনায় এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।”

আনিসুল হক বলেন, এ ধরনের অপরাধীদের বিচারে মামলা প্রমাণ করার জন্য এতোগুলো ধাপ ‘বিশ্বে কোথাও দেওয়া হয় না’।  বাংলাদেশে তাদের সেই সুযোগ দিয়ে ‘সর্বাত্মক আইনি সুযোগ’ নিশ্চিত করে বিচার শেষ করা হয়েছে।

“আমাদের যে বক্তব্য, জগনণের ব্ক্তব্য, সেটাই বিচারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

রায় কার্যকরের পরবর্তী ধাপগুলো ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ফাঁসির আসামি এখন কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারবেন। ওই সিদ্ধান্ত জানাতে তাকে ‘যৌক্তিক সময়’ দেওয়া হবে। এ ছাড়া আর কোনো সুযোগ তার সামনে খোলা নেই।

বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি হতে কতোদিন সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “রিভিউয়ের রায় বের হতে তো বেশি সময় লাগার কথা না। সেইটুকু সময় হয়তো তারা হাতে পাবেন। এর আগে যতগুলো ফাঁসির রায় কার্য্কর হয়েছে, যেভাবে সেগুলো করা হয়েছে, সেইভাবে এটাও করা হবে।”

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “আরেকটা কথা আজ কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক হলেও আমাকে বলতে হচ্ছে, আমি ধন্যবাদ জানাই, তারা এই ৪৪ বছর পরেও এই মামলাগুলোর সাক্ষ্য প্রমাণ যোগাড় করে এই পর্য ন্ত আনতে সহযোগিতা করেছেন, সেই জন্য।”