বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল-মুবারক আল-হামাদ আল-সাবাহর নেতৃত্বে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এই বিষয়ে মতৈক্য হয়।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বুধবার বিকালে এই বৈঠক হয়।
বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “টেররিজম এবং এক্সট্রিম ভায়লেন্সের বিষয়ে দুদেশের পলিসির প্রচুর মিল আছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে একসাথে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন।”
তিনি বলেন, “এটা মানবতাবিরোধী এবং মুসলিম উম্মাহর সংহতি পরিপন্থি।
“দুই প্রধানমন্ত্রী টেররিজম এবং এক্সট্রিম ভায়লেন্সের এগেইনস্টে তাদের জিরো টলারেন্সের কথা উল্লেখ করেছেন।”
চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় কুয়েতের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন শেখ জাবের।
বৈঠকে চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সহযোগিতার কথাও জানতে চেয়েছেন শেখ জাবের।
শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ এবং ওআইসির নেতৃত্বাধীন এইসব কাজে কাজ করে যাচ্ছে।”
বৈঠকে সিরিয়া এবং লিবিয়ায় সংঘাতের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইসলামিক উম্মা এবং সিরিয়া ও লিবিয়ার কথা এসেছে।”
“এখন যে মুসলিম উম্মাহ একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, বিভিন্ন কনফ্লিক্টে বিভিন্ন এলাকায় যে নানা ধরনের সমস্যার তৈরি হয়েছে এবং বিভিন্ন কনফ্লিক্টের জন্য যে ডিসপ্লেসমেন্ট হচ্ছে, সেখানে কী কাজ করবার আছে- তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে”, বলেন শহীদুল হক।
তিনি বলেন, “এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে ওআইসি, ইউএন এবং শান্তিরক্ষা মিশনে .. সে বিষয়টি এসেছে।”
আন্তরিক ও সোহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি হয় জানিয়ে শহীদুল হক বলেন, “এই সফরের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন সহযোগিতার দ্বার উন্মোচিত হলো। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।”
বৈঠকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র এবং বাংলাদেশের সঙ্গে কুয়েতের সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশ ও কুয়েত মুসলিম উম্মাহর জন্য একত্রে কাজ করতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন।
বিনিয়োগে সহযোগিতা বাড়াতে দুদেশের চুক্তির প্রসঙ্গ তুলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “বাংলাদেশে কুয়েতের বিনিয়োগকারীদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে কুয়েতের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।”
শেখ জাবের আল-মুবারক আল-হামাদ আল-সাবাহ বাংলাদেশে বিনিয়োগে শেখ হাসিনার এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।
বাংলাদেশের জ্বালানি ক্ষেত্রে কুয়েতকে সহায়তার প্রস্তাবও দেন শেখ হাসিনা।
কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী জানান, তার দেশ বাংলাদেশের জ্বালানি ক্ষেত্রে সহায়তায় আগ্রহী।
বঙ্গোপসাগরের জ্বালানি সম্পদ উত্তোলনে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহও প্রকাশ করেন তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, কুয়েতে বাংলাদেশের কর্মজীবীদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধিতে দুদেশের মধ্যে ‘জয়েন্ট গ্রুপ’ গঠন করে আলোচনার প্রস্তাবও আসে বৈঠকে।
প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা আরও বাড়ার আশা প্রকাশ করে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্বের প্রশংসা করেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী।
শহীদুল হক বলেন, “দুদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আরও নিবিড় আলোচনার বিষয়েও কথা হয়েছে।”
দুদেশের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টে এন্ট্রি ভিসা ইস্যুর বিষয়টি সহজ করার চুক্তি প্রসঙ্গে শহীদুল হক বলেন, “আমি মনে করি, এটি একটি নতুন ওপেনিং। জিসিসি (গাল্ফ কোয়াপারেশন কাউন্সিল) দেশের মধ্যে বিনা ভিসায় যেতে পারবে।”
অন্যান্য ক্যাটাগরির ভিসার সুবিধার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে শেখ হাসিনা ও শেখ জাবের আল-মুবারক আল-হামাদ আল-সাবাহর মধ্যে একান্ত বৈঠক হয়।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাণিজ্য, সামরিক ও ঋণ সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে চারটি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ ও কুয়েত।
শেখ জাবের আল-মুবারক আল-হামাদ আল-সাবাহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছলে শেখ হাসিনা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।