কিছু বাংলাদেশি ‘হত্যার শিল্প’ রপ্ত করেছে: এইচ টি ইমাম

সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলোকে ‘বিচ্ছিন্ন’ বিবেচনা না করে এদের সংশ্লেষ খুঁজে দায়ীদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2016, 12:07 PM
Updated : 4 May 2016, 12:07 PM

বুধবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমাদের আশপাশে কিছু ঘটনা ঘটছে। মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। এগুলোকে বিচ্ছিন্ন মনে হতে পারে। কিন্তু আমরা হত্যার ধরন দেখে যদি সবগুলোকে এক করে দেখি, তাহলে ভিন্ন পরিস্থিতি প্রতিভাত হয়।

“বাংলাদেশের কিছু লোক হত্যার শিল্প যথাযথভাবে রপ্ত করেছে। এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে এবং সমাজ থেকে উচ্ছেদ করতে হবে।”

দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার বিরোধীরা এসব কাজে জড়িত বলে মনে করেন এইচ টি ইমাম।

তিনি বলেন, “তারা এসব করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে আতঙ্কিত করে তুলছে। বাংলাদেশে আইএস বা আল কায়েদা আছে এমন কথা তুলে বিদেশিদের প্রভাবিত করতে চাচ্ছে।

“আমরা জানি, এর সঙ্গে কারা জড়িত। এরা বাংলাদেশ আদর্শের বিরোধী ও একাত্তরের পরাজিত শক্তি। এসব ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করবো এবং সমাজ থেকে আলাদা করবো।”

‘জাতীয় উন্নয়নে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে সম্পৃক্তকরণ: পথ নির্দেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

পাকিস্তান আমল ও বিএনপির দুই আমলে আএসআই এর উপস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংঘাতের সমাধান না হয়ে আরও ঘনীভূত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের সাবেক এই জেলা প্রশাসক।

তিনি বলেন, “পাকিস্তান সেনাবাহিনী ওই অঞ্চলে সর্বপ্রথম সমস্যা সৃষ্টি করে। তখন আএসআই এর সরব উপস্থিতি সেখানে ছিল। স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর সরকার তাদেরকে সেখান থেকে বের দেয়। কিন্তু জিয়ার আমলে পুণরায় আইএসআই পূর্ণ শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হয়।”

“পাহাড়িদের জন্য সবচেয়ে উর্বর ভূমি এলাকায় ওই লেক নির্মাণ করা হয়। এ কারণে অনেক আদিবাসী পৈতৃক ভিটেসহ ফসলি জমি হারায়।”

শান্তিচুক্তি হওয়ার পর ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি আমলে আইএসআই পুণরায় সেখানে উপস্থিত হতে পেরেছিল বলেও অভিযোগ করেন এইচ টি ইমাম।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জাতীয় উন্নয়নে অবদানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং তাদের অবস্থা বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার মূলে আছে সেখানকার ভূমি সমস্যা। এজন্য ভূমি কমিশনকে কার্যকর করা উচিত। এক্ষেত্রে আদিবাসী জনগণের অংশগ্রহণটাও জরুরি।”

“কীভাবে এই সমস্যা মোকাবেলা করা যাবে সে বিষয়ে কমিশন ও পাহাড়ী জনগণের মধ্যে কার্যকর সংলাপ হতে হবে।”

অনুষ্ঠানে সাবেক রাষ্ট্রদূত অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আসহাব উদ্দিন বলেন, বাঙালিরা হচ্ছে আধিপত্যশীল সংখ্যাগুরু। আর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যেও চাকমা-মারমাদের মতো আধিপত্যশীল সংখ্যালঘু আছে। এজন্য যারা পিছিয়ে পড়া আদিবাসী আছে তাদেরকে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়নের পরিকল্পনা করতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে আসছে মন্তব্য করে চট্টগ্রাম বিভাগের সাবেক এই জিওসি বলেন, শান্তিচুক্তির আগে পাঁচশ’র উপরে ক্যাম্প ছিল। এখন সেটার সংখ্যা ২০০’র মতো। আস্তে আস্তে এই সংখ্যা শান্তিচুক্তি অনুযায়ী ৬টি গ্যারিসনের দিকে যাবে।”

তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর অবস্থান নিয়ে নানা কথা হয়, হতে পারে। তবে সেনাবাহিনী সেখানকার অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিক্ষার বিস্তারে কাজ করছে। যেটা সেখানকার জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখছে।

আসহাব উদ্দিন বলেন, ৫৪টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে কয়েকটির ভাষা আছে। অনেকের ভাষা হারিয়ে গেছে। তবে তাদের জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত। অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ে হলেও।

পাশাপাশি নৃ-গোষ্ঠীদের জমি দখল বন্ধ, নিজস্ব এলাকায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি এবং সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৭৫টি আদিবাসী আছে। এদের মধ্যে ১১-১৩ জাতির আদিবাসী পাহাড়ে বসবাস করে। বাকিদের বসবাস বসবাস করে। এরা কোনো মন্ত্রণালয়ের অধনে নেই। তারা সরকারি নানা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

তিনি বিদ্যমান পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সমতলের আদিবাসীদের মধ্যেও বিস্তৃত করার আহ্বান জানান।

এছাড়া পরিসংখ্যানে না থাকায় অন্তর্ভুক্ত না থাকায় তাদের সন্তানরা সরকারি চাকুরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় অভিযোগ এনে পরিসংখ্যাণের ক্ষেত্রেও বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ, বিআইআইএসএস-এর বোর্ড অব গভর্নরসের চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমেদ ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আবদুর রহমান, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত বক্তব্য দেন।