বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্ন গাড়িতে আলগা স্টিকার লাগানো থাকে। পুলিশ, সাংবাদিক, আইনজীবী... এটা কেন? রাস্তায় আমরা সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চলব। এই আলাদা স্টিকার লাগানোর কোনো প্রয়োজন নেই।”
পুলিশ কমিশনার বলছেন, এভাবে কাগজে পেশাগত পরিচয় বা প্রতিষ্ঠানের নাম লিখে গাড়িতে লাগিয়ে চলাফেরা করে তল্লাশি এড়ানোর সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।
“পুলিশ লেখা স্টিকার লাগিয়ে যদি গাড়ি চলে, দেখা গেল যে ৯৯টা পুলিশের গাড়িতে স্টিকার লাগানো আছে, কিন্তু একজন সন্ত্রাসী সেই সুযোগ নিয়ে তার গাড়িতে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে তল্লাসির বাইরে থেকে অপরাধ সংঘটিত করছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, জঙ্গি, বোমাবাজি, অস্ত্রবাজির মত ঘটনাও ঘটাতে পারে।”
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “এজন্য ট্রাফিক পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কোনোভাবেই পুলিশ, ডিএমপি অথবা আইনজীবী, সাংবাদিক এই সমস্ত লেখা আলগা স্টিকার দিয়ে কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারবে না।”
কোন কোন ক্ষেত্রে কীভাবে স্টিকার ব্যবহার করা যাবে, সে বিষয়েও ব্রিফিংয়ে ব্যাখ্যা দেন পুলিশ কমিশনার।
“কোনো সাংবাদিক দায়িত্ব পালনকালে, গাড়ি নিয়ে অফিশিয়াল কাজে যাওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানের নামাঙ্কিত গাড়ি- যেমন …চ্যানেল….সেটিতে সমস্যা নেই, যেহেতু গাড়িতে প্রতিষ্ঠানের নামাঙ্কিত রয়েছে। আমরা বলছি, ‘আলগা’ স্টিকার... যেটি সন্ত্রাসীরা খুব সহজেই পুলিশের, সাংবাদিকের পরিচয়, আইনজীবীর পরিচয় দিয়ে যেন অপরাধ করতে না পারে।”
পুলিশের এই নির্দেশনা অনুসরণ করা না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ার করেন।
সরকারি দপ্তর বা পেশাগত পরিচিতি লেখা সাদা কাগজ গাড়িতে সেঁটে পুলিশ এড়িয়ে মাদক চোরাচালানের চেষ্টা বিভিন্ন সময়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে।
গতবছর নভেম্বর কুমিল্লার চান্দিনায় ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্টিকার লাগানো’ একটি গাড়ি থেকে ৩০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারের খবর জানায় পুলিশ। তার আগের বছর চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় একটি মাইক্রোবাসে চোলাই মদ পাওয়া যায়, যে গাড়িতে ‘পুলিশ’ লেখা স্টিকার লাগানো ছিল।
গতবছর অগাস্টে যশোরে ‘জাতীয় সংসদ সদস্য’ স্টিকার লাগানো একটি প্রাইভেটকার থেকে ফেনসিডিল উদ্ধার করে পুলিশ। তার আগে জুলাইয়ে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের স্টিকার লাগানো প্রাইভেটকার থেকে জব্দ করা হয় চোরাই পথে আসা ভারতীয় কাপড়।
২০১১ সালে লালমনিরহাটে গাড়িতে ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়’ লেখা ভুয়া স্টিকার লাগিয়ে ঘোরার সময় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যিনি যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আত্মীয়।
এ ধরনের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ২০১৪ সালে এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, সংসদের সদস্য সংখ্যা সাড়ে তিনশ হলেও দেশের রাস্তায় ‘সংসদ সদস্য’ লেখা স্টিকার লাগানো গাড়ির সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের বেশি বলে তার ধারণা।
মহানগর পুলিশের ব্রিফিংয়ে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, একটি দেশে আইন প্রণয়ন হয় সেই আইন সবাই মানবে এই প্রত্যাশায়। এর মধ্যে যে দুই-একজন আইন মানবেন না, তারা যেন আইন মানেন তা দেখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়োজিত করা হয়। কিন্তু চিত্রটা যদি উল্টে যায়, অধিকাংশই যদি আইন না মানেন, সেক্ষেত্রে কেবল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না।
“এখন থেকে সাত-আট মাস আগে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশনগুলোতে ভিডিও করেছিলাম। কারা উল্টো পথে যায়, কারা ট্রাফিক রুলস ভায়োলেট করে দেখতে। অভিজ্ঞতাটা সুখকর ছিল না।
“আমরা দেখেছি, যারা ট্রাফিক রুলস ভায়োলেশন করে উল্টো পথে গাড়ি নেয়, তাদের একটি বড় অংশ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত কর্তাব্যক্তি। ভিডিওচিত্রের ছবিসহ আমরা সংশ্লিষ্টদের পত্র দিয়েছি। আইন মানার ব্যাপারে পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।”
চিঠি দেওয়ার পর সেই ব্যক্তিদের ট্রাফিক আইন ভাঙার প্রবণতা কমেছে বলে দাবি করেন তিনি।
যানজট ‘সহনীয় পর্যায়ে’ নিয়ে আসতে নগরবাসীকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার অনুরোধ করেন তিনি।
অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন, পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।