যুদ্ধাপরাধ: কিশোরগঞ্জের ৫ আসামির রায় ৩৩০ পৃষ্ঠার

কিশোরগঞ্জের আইনজীবী শামসুদ্দিন আহমেদসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলায় ৩৩০ পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2016, 05:31 AM
Updated : 3 May 2016, 05:50 AM

তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

পাঁচ আসামির মধ্যে কেবল শামসুদ্দিন কাঠগড়ায় উপস্থিত রয়েছেন। তার ভাই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, একাত্তরের ‘রাজাকার কমান্ডার’ গাজী আব্দুল মান্নান, আজহারুল ইসলাম ও হাফিজ উদ্দিনকে পলাতক দেখিয়েই রায় ঘোষণা করছে ট্রাইব্যুনাল। 

মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে বিচারপতি আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে রায়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। 

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানের প্রারম্ভিক বক্তব্যের পর বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী ৩৩০ পৃষ্ঠার রায়ের সার সংক্ষেপ পড়া শুরু করেন। এরপর বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম রায়ের বাকি অংশ পড়বেন এবং সবশেষে বিচারপতি আনোয়ারুল হক সাজা ঘোষণা করবেন।

শামসুদ্দিন আহমেদ

ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম ঝিনুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আসামি শামসুদ্দিনকে সকাল ৯টার পর কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়। ট্রাইব্যুনালে পৌঁছানোর পর তাকে রাখা হয় হাজতখানায়।

২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর এটি ২৩তম রায়।

এদিকে যদ্ধাপরাধী জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীর আপিল রায়ের রিভিউ শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে ট্রাইব্যুনাল এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের সবগুলো প্রবেশ পথে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। ঢোকার সময় সবার পরিচয়পত্র দেখা হচ্ছে। সন্দেহ হলে করা হচ্ছে তল্লাশি।

গতবছর ১২ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে কিশোরগঞ্জের পাঁচ আসামির এই যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচার শুরু হয় ট্রাইব্যুনালে। দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে আদালত গত ১১ এপ্রিল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখে।

প্রসিকিউশনের পক্ষে তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ২৫ জন এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষে কোনো সাক্ষী ছিল না।

সাত অভিযোগ

অভিযোগ ১: ১৯৭১ সালের ১২ নভেম্বর দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার বিদ্যানগর ও আয়লা গ্রামের মোট আট জনকে হত্যা ও একজনকে আহত করা।

এ ঘটনায় পাঁচজনকেই আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ।

অভিযোগ ২: ১৩ নভেম্বর আয়লা গ্রামের মিয়া হোসেনকে হত্যা।

আসামি নাসিরের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে এ ঘটনায়।

অভিযোগ ৩: একই উপজেলার মো. আব্দুল গফুরকে অপহরণ করে ২৬ সেপ্টেম্বর খুদির জঙ্গল ব্রিজে নিয়ে হত্যা।

এ ঘটনায় পাঁচজনকেই আসামি করা হয়েছে। অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ ৪: ২৩ অগাস্ট করিমগঞ্জ উপজেলা ডাকবাংলোতে শান্তি কমিটির কার্যালয়ে আতকাপাড়া গ্রামে মো. ফজলুর রহমান মাস্টারকে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যা।

এ ঘটনায় পাঁচজনকেই আসামি করা হয়েছে। অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ ৫: ৭ সেপ্টেম্বর রামনগর গ্রামের পরেশ চন্দ্র সরকারকে হত্যা।

আসামি শামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে এ ঘটনায়।

অভিযোগ ৬: ২৫ অগাস্ট পূর্ব নবাইদ কালিপুর গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক ও রূপালীকে অপহরণ করে নির্যাতন ও হত্যা।

আসামি মান্নানের বিরুদ্ধে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে এ ঘটনায়।

অভিযোগ ৭: ১৫ সেপ্টেম্বর আতকাপাড়া গ্রামে আক্রমণ করে ২০-২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ।

আসামি মান্নানের বিরুদ্ধে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে এ ঘটনায়।