মানুষের ভালোবাসা পেয়েছিলেন মজিবুর: প্রধানমন্ত্রী

ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান ফকির তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেছিলেন মন্তব্য করে একে তার রাজনৈতিক জীবনের ‘বড় অর্জন’ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2016, 02:16 PM
Updated : 2 May 2016, 02:16 PM

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সোমবার সকালে মারা যাওয়া সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর স্মরণে বিকালে সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।

আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “তিনি (মজিবুর) একজন মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার ছিলেন। তার নার্সিং হোমে যদি কোনো গরীব রোগী যেতেন, তাহলে অনেক সময় বিনা পয়সায় বা অর্ধেক খরচে চিকিৎসা করে দিতেন।”

গৌরীপুর থেকে তিনবার নির্বাচিত এই সাংসদ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মাটি ও মানুষের সাথে একাত্মা হয়ে তিনি কাজ করতেন। যেটা হয়, নির্বাচনে নমিনেশন দেওয়ার আগে নানা কথা শোনা যায়।

“কিন্তু আমি জানতাম- তিনি যেভাবে মানুষের সেবা করেন, মানুষের পাশে দাঁড়ান, কাজ করেন, তাতে আগামীতে বেঁচে থাকলে যতবার নমিনেশন দিতাম, তাকে হারাবার মতো কোনো শক্তি ছিল না। তিনি যে ভালোবাসা অর্জন করেছিলেন, সেটা একটা রাজনৈতিক জীবনে অত্যন্ত বড় অর্জন।”

২০০৯-২০১৪ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মজিবুর রহমান ফকির নিজেও পেশায় একজন চিকিৎসক ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “তাকে যখন আমি স্বাস্থ্যসেবায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলাম . . ., বিশেষ করে আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগটা তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেছিলেন।

“স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের যে অর্জন, সেটা অনেক উন্নত দেশও করতে পারেনি। অতি অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌছে দিতে সক্ষম হয়েছি। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তিনি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন।”

মজিবুর চিকিৎসক ও সমাজসেবক হিসেবে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি রাজনীতিবিদ হিসেবে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন মন্তব্য করে তার মৃত্যুকে আওয়ামী লীগের ‘বড় ক্ষতি’ বলে অভিহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।

“মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, কখনো কেউ তার বিরুদ্ধে একটি কথা বলতে পারেনি। তিনি সেভাবেই মানুষের সেবা করেছেন। আওয়ামী লীগের জন্য বড় ক্ষতি হয়ে গেল। কারণ এই এলাকায় তিনি নিশ্চিত সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য ছিলেন।”

রোববার হয়ে যাওয়া ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাংসদ মজিবুরের ‘নিষ্ঠার সঙ্গে’ দায়িত্বপালনের কথা স্মরণ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

“মৃত্যু অবধারিত, সকলকে একদিন চলে যেতে হবে। কিন্তু মানুষের জন্য কতটুকু রেখে যেতে পারলাম, সেটাই কিন্তু বড় কথা। আমি মনে করি তিনি গৌরীপুরবাসী এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সমগ্র বাংলাদেশের জন্য অনেক অবদান রেখে গেছেন, যা চিরদিন মানুষ স্মরণ রাখবে। ”

আলোচনা শেষে স্পিকারের উত্থাপিত শোক প্রস্তাব সর্ব সম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম রুহুল হক, চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, খাদ্যপ্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, ময়মনসিংহ-৮ আসনের সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম, ময়মনসিংহ-৯ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান অংশ নেন।

আলোচনার পর মজিবুর রহমান ফকিরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সংসদে এক মিনিট নিরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া।

চলতি সংসদের কোনো সদস্য মারা গেলে পরবর্তী বৈঠকে শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনা করে অধিবেশন মুলতবির রেওয়াজ রয়েছে।

রোববার রাত আড়াইটার দিকে বুকে ব্যথা নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসার পর সোমবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মজিবুর।

গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মজিবুর রহমান ফকিরের বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। বিকাল ৪টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় মজিবুর রহমান ফকিরের জানাজা হয়।

২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৩ আসন থেকে জয়ী হওয়ার পর তিনি বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।