ঢাকা উত্তরে ৫ লাখ গাছ রোপণে অভিযান শুরু

ঘন বসতির শহর ঢাকায় সবুজের সমারোহ ফিরিয়ে আনতে নতুন করে পাঁচ লাখ গাছ রোপণের কর্মসূচি শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসির)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2016, 01:33 PM
Updated : 2 May 2016, 02:04 PM

সোমবার উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে তিন বছর মেয়াদী এই কর্মসূচির উদ্বোধন করে ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক বলেন, ঢাকাবাসীকে সবুজ ঢাকা উপহার দেওয়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল তার। ধীরে ধীরে সব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করা হবে।

ডিএনসিসির এই সবুজায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে যুক্ত থাকছে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবীরা।

আনিসুল হক বলেন, দূষিত আবহাওয়ার কারণে ঢাকা শহরের ২৫ ভাগ শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গেছে। এর সমাধান হচ্ছে বেশি বেশি গাছ লাগানো।

সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কারণে গত ছয় মাসে উত্তরার ৩, ৫, ৭ ও ১১ নম্বর সেক্টরের কয়েকটি সড়কে ব্যাপকহারে গাছ কাটা হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই তখন এর প্রতিবাদ করেছিলেন। 

অনুষ্ঠানে উত্তরার এসব বৃক্ষনিধন নিয়েও কথা বলেন মেয়র।

“উত্তরায় আমরা কিছু গাছ কেটেছি যেগুলো ফুটপাত ছেড়ে রাস্তার অংশে ছিল। একটি গাছ কাটার আগে আমরা সাবধানতার সঙ্গে অনেক চিন্তা ভাবনা করেছি। উত্তরায় গাছ কাটার কারণে সেখান থেকেই সবুজায়নের কাজ শুরু করা হয়েছে।”

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, তিন বছরে ৫ লাখ গাছ রোপনের পরিকল্পনা রয়েছে ডিএনসিসির। তবে দুই বছরের মধ্যেই রোপনের কাজ শেষ করা যাবে বলে আশা করেন মেয়র।

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, “এক সময় এই ঢাকা ছিল সবুজের কোলে। কিন্তু দিনে দিনে সেই সবুজ অনেকটাই হারিয়ে গেছে। বৃক্ষরোপণ উদ্যোগ বাস্তবায়নের মধ্যমে পাঁচ বছর পর উত্তরায় সবুজ ফিরিয়ে দিতে চাই।”

বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, বৃক্ষ রোপনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে ভূমিকে। ভূমি না থাকলে বারান্দা, কার্নিশ, বাড়ির ছাদকে কাজে লাগাতে হবে।

“প্রতি ৫ কাঠা জমিতে একটি করে বড় গাছ লাগাব। বড় গাছের সংকুলান না হলে মাঝারি আকারের গাছ, তা না হলে ছোট্ট একটি গাছ হলেও রোপন করব,” বলেন এই অধ্যাপক।

উদ্বোধনীর পর উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে ডিএনসিসির কমিউনিটি সেন্টারের পাশের সড়কে বেশ কয়েকটি গাছ রোপন করেন অতিথিরা। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, জাদুশিল্পী জুয়েল আইচসহ স্থানীয় কাউন্সিলররা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

শপথ গ্রহণের এক বছর

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হলেও দায়িত্ব গ্রহণের ঠিক এক বছরের মাথায় ঘটা করে সবুজায়নের কর্মসূচি দেন মেয়র আনিসুল। তবে অনুষ্ঠানে বক্তব্যের বেশি অংশ জুড়েই ছিল বিগত এক বছরের কাজের হিসাব।

আগামী ৬ মে দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরে পৌঁছবেন মেয়র আনিসুল হক।

মেয়র বলেন, “নির্বাচনের আগে ক্লিন ঢাকা, গ্রিন ঢাকা, সেইফ ঢাকা, যানজটমুক্ত ঢাকাসহ আরও অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। এর প্রত্যেকটির কাজ চলছে, এগিয়ে যাচ্ছে। আপনারা যদি হাত লাগান, তাহলে আরও দ্রুত এগিয়ে যাবে।”

“বিগত এক বছরে অনেক কাজ করেছি। এগুলোর হিসাব দিতে গেলে কয়েক ঘণ্টা লেগে যাবে।”

বর্জ্য নিষ্কাশন প্রসঙ্গে আনিসুল বলেন, বর্জ্য নিষ্কাশনে অনেক উদ্যোগ নিলেও এর ফল পুরোপুরি আসতে শুরু করেনি। ড্রেনেজগুলো পরিষ্কারের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের না হলেও নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের উদ্দেশ্যে সেই কাজটি করা হচ্ছে।

“এখন অনেক স্থানে রাস্তায় বর্জ্য পড়ে আছে। এর অবসান চাই।”

ঢাকা উত্তরে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া ৭২টি এসটিপির মধ্যে ৬০টির জন্য জায়গা পাওয়া গেছে জানিয়ে মেয়র বলেন, “বাকি ১০/১২ টার জন্য জায়গা এখনও পাওয়া যায়নি। ১৪টি চালু হয়েছে, আরও ৪৬টির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসে ও এর পরের মাসে এগুলো চালু করা যাবে।”

বক্তব্যে নগর ভবনের কাজে স্বচ্ছতা ও ঠিকাদারদের মধ্যে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা, ২০ হাজার বিলবোর্ড অপসারণ ও ১৪টি উন্নতমানের পাবলিক টয়লেট চালু এবং মোহাম্মদপুর ও গাবতলীসহ ১০টি বড় জায়গা দখলমুক্ত করার কথা গত এক বছরের সফলতা উল্লেখ করেন আনিসুল হক।

এছাড়া মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, গুলশান ও বারিধারা এলাকায় নিরাপত্তায় ৬০০ সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো, যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ১৫/২০টি স্থানে ইউলুপ নির্মাণের পরিকল্পনা এবং গাবতলী বাজার থেকে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা হয়েছে বলে জানান ঢাকা উত্তরের এই মেয়র।