মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশ-কুয়েত বিনিয়োগ চুক্তির খসড়া অনুমোদন

সরকারি পর্যায়ে কুয়েতের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ যোগাযোগ বাড়াতে একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2016, 09:42 AM
Updated : 2 May 2016, 09:42 AM

এই চুক্তি হলে কুয়েত পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে। দুই দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনে ভিসা সুবিধা পাবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ চুক্তির খসড়া অনুমোদন করা হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এলে দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর হবে।”

তিনি জানান, ২০০৫ সালে এই চুক্তি প্রণয়নে কাজ শুরুর পর ২০১৫ সালে কুয়েত খসড়া দেয়। বেশ কয়েকটি সভার পরে গত ১১-১৩ এপ্রিল ঢাকায় বৈঠকে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়। ওই খসড়াতেই মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে।

শফিউল আলম বলেন, “কুয়েত সরকার জিটুজি ভিত্তিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী।... বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে কর্মসংস্থান বাড়বে। প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ক্ষমতাও বাড়বে।”

কুয়েতে ভিসা লাগবে না সরকারি কর্মকর্তাদের

বাংলাদেশের কূটনৈতিক, বিশেষ ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা কুয়েতে ভিসা অব্যাহতির সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের একটি প্রস্তাবেও মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এ চুক্তি হলে কূটনৈতিক, বিশেষ ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা কুয়েতে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারবেন। কুয়েতের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরাও বাংলাদেশে এ সুযোগ পাবেন।

বর্তমানে ১৪টি দেশের সঙ্গে কূটনীতিক, বিশেষ ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের এই ভিসা অব্যাহতির সুবিধা চালু আছে। এছাড়া সিআইপি (কমারশিয়ালি ইমপরটেন্ট পারসন) বা বিশেষ সংস্থার প্রতিনিধিসহ আরও কিছু ব্যক্তি ‘বিশেষ পাসপোর্ট’ ব্যবহার করেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।

বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, ভারত, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, চীন, চিলি, তুরস্ক, লাওস, কম্বোডিয়া, বেলারুশ, ব্রাজিল ও কম্বোডিয়ায় সঙ্গে বাংলাদেশের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি রয়েছে।

আরও ১০টি দেশের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি সইয়ের বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বাড়ছে কোম্পানি ফি

কোম্পানি আইনের তফসিল পরিবর্তন করে বিভিন্ন ফির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে।

২০০৭ সালে কোম্পানি আইনের তফসিল প্রথমবারের মত পুনর্বিন্যাস করা হয় জানিয়ে শফিউল বলেন, আট বছর পরে নতুন করে পরিবর্তন করা হচ্ছে।

“রাজস্ব খাতে কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। এই খাত থেকে ৭০ কোটি টাকার মত পাই। যেহেতু ইকোনমির সাইজ অনেক বড়, তাই রাজস্ব যোগান দিতে হয়। এজন্য ফি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।”

তফসিল পরিবর্তন করে বিভিন্ন ফির পরিমাণ বাড়ানোয় এখন এ খাত থেকে দেড়শ কোটি টাকার মতো পাওয়া যাবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।

সার্ক বিদ্যুৎ ‘ফ্রেমওয়ার্ক’

সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ আমাদানি-রপ্তানির জন্য ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ তৈরিতে একটি কাঠামো চুক্তিতে অনুসমর্থনের প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “সার্ক ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট ফর এনার্জি কো-অপারেশনে (ইলেকট্রিসিটি) অনুসমর্থনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। কনসার্ন সিগনেটরি সই করলে এটা কার্যকর করব।”

তিনি বলেন, “ভারত থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছি, আসাম থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছি। … এ জাতীয় অঞ্চলের অনেক দেশের বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত আছে। … ভুটান ভারতে বিদ্যুৎ রপ্তানি করে, আমরাও সেই শেয়ারিংয়ে অন্তর্ভুক্ত হতে পারি, এজন্য এই চুক্তিটি আনা হয়েছে।”

রেলওয়ে সম্পত্তি আইন

রেলের সম্পত্তি চুরি বা অবৈধ দখল ঠেকাতে আগের মতোই সাত বছরের জেল-জরিমানার বিধান রেখে নতুন ‘রেলওয়ে সম্পত্তি (অবৈধ দখল উদ্ধার) আইন, ২০১৬’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সামরিক সাশনামলে প্রণিত আইনগুলোকে বাংলায় ভাষান্তরের বাধ্যবাধকতা থাকায় ১৯৭৯ সালের এ আইনকে নতুন করে বাংলায় করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “আগের আইনকেই বাংলায় ভাষান্তর করা হয়েছে। আইনে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তির পরিমাণও একই রাখা হয়েছে।”