রেজাউল হত্যার প্রতিবাদে কর্মবিরতি সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীর খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে তিন ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2016, 07:34 AM
Updated : 2 May 2016, 12:04 PM

সোমবার সকাল ১০টায় সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা কালো ব্যাজ পরে কর্মবিরতি শুরু করেন। বেলা ১২টা থেকে চলে তাদের একঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি।

কর্মসূচি চলাকালে সব ধরনের ক্লাস ও বিভাগীয় পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের অধীনে কেন্দ্রীয় সব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে কলাভবনের বটতলায় অবস্থান নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

পরে এক সমাবেশে অধ্যাপক ফরিদ বলেন, “দেশে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের পর রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তারপরও তারা বড় বড় কথা বলেন। মানুষকেই যদি সিকিউরিটির দায়িত্ব নিতে হয়, তাহলে আপনারা আপনাদের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান।”

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গত অক্টোবরে একই ধরনের হামলায় নিহত জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপননের বাবা ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম ফজলুল হক।

তিনি বলেন, “দলমত নির্বিশেষে দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটা বলয় তৈরি করতে হবে। তা না হলে এই মৌলবাদী গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয়।”

ফেডারেশন মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, অর্থনীতির অধ্যাপক শফিক উজ জামান, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভুইঁয়া, অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক অধ্যাপক জিয়া রহমান, আইন বিভাগের অধ্যাপক রহমত উল্লাহ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মশিউর রহমান, অ্ধ্যাপক নিজামুল হক ভুইঁয়া ও অধ্যাপক ফরিদা রশিদ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মাকসুদ কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেছে বেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষদের হত্যা করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের হত্যা করা হয়েছে- তা এখনো অব্যাহত আছে।”

পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, “অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয়েছে, এতোজন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল- এই ধরনের কথা আমরা শুনতে চাই না।

“আমরা চাই অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।”

অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষদের এইসব হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধে ‘মনিটরিং সেল’ গঠনের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান এই শিক্ষক নেতা।

“আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলব।”

মঙ্গলবার সকাল ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফেডারেশনের নেতৃত্বে প্রতিবাদ সভা ও বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে জানান মাকসুদ কামাল।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যায় তার বিভাগের ছাত্র শরিফুল ইসলাম  জড়িত থাকতে পারে সন্দেহে তার বিষয়ে তথ্য জানতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার বাবা ও ভাই এবং আরও তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ।

তারা বলছে, শরিফুল প্রায় এক বছর থেকে ‘নিয়মিত’ ক্লাস করে না।

২৩ এপ্রিল রাজশাহীর শালাবাগান এলাকায় নিজ বাসা থেকে ৫০ গজ দূরে রেজাউল করিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই দিনই নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন তার ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ।

পরে গোয়েন্দা পুলিশকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।