‘প্রেম করা’য় তরুণ হত্যা, চার্জশিট দিচ্ছে পিবিআই

‘প্রেম করা’য় প্রায় ছয় বছর আগে রাজধানীর খিলক্ষেতে শহিদুল ইসলাম কামাল নামে এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশের দুই তদন্ত সংস্থা আসামি খুঁজে না পেলেও মেয়ের বাবাসহ চার জনের নামে অভিযোগপত্র তৈরি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2016, 04:15 PM
Updated : 30 April 2016, 07:16 PM

পিবিআই পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, কামাল হত্যামামলার অভিযোগপত্রে তার ‘প্রেমিকা’র বাবা হিরণ খান ও তার সহযোগী জাকির, আমির ও সিরাজকে আসামি করা হয়েছে।

কুর্মিটোলা হাইস্কুলের পেছনে থাকেন হিরণ। জাকির তার গাড়িচালক; বাকিরা জাকিরের বন্ধু। এদের মধ্যে সিরাজ পলাতক, আর বাকিরা জামিনে আছেন বলে সিরাজুল জানান।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ঢাকার বিমানবন্দর এলাকার ট্যাক্সিচালক কাম ব্যবসায়ী হিরণ খান লোকজন নিয়ে ২০১০ সালের ২৯ মে শহিদুল ইসলাম কামালকে ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম করে। ২১ দিন পর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

এইচএসসি পড়ুয়া ২০ বছর বয়সী শহিদুল একটি মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্ক টাওয়ার স্থাপনের মাঠ পর্যায়ের কর্মী ছিলেন বলে তার বাবা হানিফ বাবুল জানিয়েছেন।

ঘটনার পর হানিফের করা হত্যা মামলার তদন্ত শেষে ‘কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ না পাওয়ার কথা’ বলে সিআইডি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে বাদী নারাজি আবেদন দেন।

পরে তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে একইভাবে ডিবি পুলিশও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে নিহতের বাবা আবারও আদালতে নারাজি দেন। এরপর আদালত পিবিআইকে দায়িত্ব দেয়।

২০১৫ সালের অক্টোবরে এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু তথ্য পান পিবিআই পরিদর্শক সিরাজুল।

তিনি বলেন, “সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেয়ের সঙ্গে কামালের প্রেমের বিষয়টি হিরণ খান মেনে নিতে পারেননি। পরে কৌশলে ২০১০ সালের ২৯ মে মধ্যরাতে তাকে ডেকে নিয়ে তার লোকজনকে দিয়ে মারধর করে বিমানবন্দর সড়কে ফেলে রাখে।

“কোনো গাড়ি তার উপর দিয়ে গেলে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালানো যাবে- এই তাদের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ক্ষিলখেত থানার টহল পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।”

কামালের স্বজনদের বরাত দিয়ে এই পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, “মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর‌্যন্ত কথা বলেছে। সে অনেককেই মারধরের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।”

এছাড়াও মোট পাঁচ সাক্ষী হিরণ খানসহ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

“তাছাড়া তদন্তে পেটানোর ঘটনাসহ আরো কিছু আলামত পাওয়া গেছে যে, কামাল হত্যাকাণ্ডটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল।”

কামালের বাবা গার্মেন্ট সামগ্রীর ক্ষুদ্র সরবরাহকারি হানিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুধুমাত্র হিরণ খানের মেয়েকে ভালবাসার কারণে তার ছেলেকে জীবন দিতে হল।

“কামালকে মারধর করার আগের ওই দিন হিরণ খান ও তার লোকদের সঙ্গে ছেলেকে দেখতে পান হানিফ। তারা আমাকে বলে, ‘আপনি চলে যান। আপনার ছেলে পরে যাবে।”

তদন্ত কর্মকর্তা সিরাজুল বলেন, “হিরণ খান, তার গাড়ি চালক জাকির এবং জাকিরের বন্ধু আমির ও সিরাজ এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

“ঘটনার পর থেকে হিরণ খান এবং জাকির জামিনে আছে। পরে পিবিআই আমিরকে গ্রেপ্তার করলেও জামিন লাভ করে।”