হত্যা-খুন রুখার এখনই সময়: সংস্কৃতিমন্ত্রী

দেশব্যাপী চলমান হত্যা-খুন বন্ধে ‘আলোকিত মানুষ তৈরির’ সংস্কৃতি চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2016, 01:04 PM
Updated : 28 April 2016, 01:04 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সংস্কৃতি চর্চা ছাড়া আলোকিত মানুষ গড়া সম্ভব নয়। আমরা যদি আলোকিত মানুষ গড়তে না পারি তাহলে অন্ধকারের শক্তি বারবার আঘাত হানতেই থাকবে এবং আঘাত কিন্তু হানছে।

“আমরা একের পর এক মানুষগুলোকে হারাচ্ছি। আমরা অভিজিৎকে, দীপনকে, রাজীবকে, নাজিমকে, তনুকে, জুলহাজকে এবং রাজশাহীর অধ্যাপক রেজাউলকে হারাচ্ছি।”

এসব খুন ও অপশক্তির উত্থানের বিরুদ্ধে সরকারের পাশাপাশি অভিভাবক, শিক্ষক ও সুধীসমাজসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী নূর।

“এই শক্তিকে প্রতিহত করার দায়িত্ব যেমন সরকারের অবশ্যই আছে, পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষেরও সচেতন ভূমিকা নেওয়ার প্রয়োজন আছে। আমরা যদি নতুন প্রজন্মকে আলোকিত মানুষ হিসাবে গড়তে তুলতে ব্যর্থ হই, তাহলে এই অন্ধকারের শক্তি আরও শক্তিশালী হবে।

“এজন্য আমি বলি, এখনই সময়, বিলম্ব করার সময় নেই। আজ শুরু করব, কাল শুরু করব, ভবিষ্যতে এটা হবে- এমনটা আমাদের মধ্যে থাকলে হবে না। এখনই রুখতে হবে।”

সারাদেশের ৭০টি গণগ্রন্থাগারে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ৪০ হাজার শিল্পবিষয়ক পাঠ্যসম্পদ তুলে দেওয়ার পর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এই সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।

অপরাধীদের ধরার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “আমরা অপরাধীদের কীভাবে ধরা উচিত, তাদের শাস্তি বিধান করা উচিত- সেখানে পিছিয়ে আছি।

“একদিকে যেমন সচেতনতা প্রয়োজন, আরেকদিকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ আমাদের জন্য বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।”

সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, “আমাদের ঐতিহ্যবাহী দিবসগুলোকে একটা শক্তি বলছে হারাম। এই শক্তিগুলো আমাদের বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক, প্রান্তিক ও উদার ভাবমূর্তিকে সারাবিশ্বের সামনে নস্যাৎ করতে চায়। এরা ধর্মও বুঝে না, সংস্কৃতিও বুঝে না।

“এরা বুঝে বাংলাদেশকে নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাওয়া, মানুষকে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্ত করা এবং বাংলাদেশের অগ্রগিতকে ব্যাহত করা।”

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ৬০ দিনের মধ্যে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ৪০ হাজার আর্ট ক্যাটালগ, ফোলিও ও বই দেশের ৭০টি শাখা, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে সম্মেলনে জানানো হয়।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের গত ২৫ বছরের কাজের একটা সন্নিবেশ এই শিল্পসম্পদগুলোতে ঘটেছে মন্তব্য করে এ সময় লিখিত বক্তব্যে এর মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, “বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিটি গ্রন্থাগারে বিশেষ মোড়কে কাঠের বাক্সে ২৩৭টি আইটেমের ৫৬৪টি ক্যাটালগ হস্তান্তর করা হয়।

“এর মধ্যে ছিল প্রায় ১২০০ শিল্পীর কাজের প্রতিলিপি, শিল্পীর সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং প্রদর্শনী ও শিল্পরীতি সম্বন্ধে শিল্প-সমালোচকদের প্রবন্ধ; শিশুশিল্পীদের কাজের প্রতিলিপি, বাংলাদেশের ১০০ জন শিল্পীর সিরিজ ‘শেকড়ে ও সৃজনে’ এবং নয়টি ফোলিও।”

অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি সচিব বেগম আকতারী মমতাজ বলেন, “শিল্পকর্ম ও শিল্প সম্পদের সংরক্ষণ ও বিকাশের দায়িত্ব আমাদের সবার। আমরা সবাই এক হলে কেবল এটা সম্ভব।

“ঢাকায় প্রদর্শনী কিংবা শিল্পের যে কাজ হয় তা প্রান্তিক পর্যায়ে সেভাবে পৌঁছায় না। তাদের জানার সুযোগ হয় না। এর মাধ্যমে জানার সুযোগ হবে।”

বেঙ্গলের পাঠানো শিল্প সম্পদসহ শিল্পকর্ম নিয়ে সব গ্রন্থাগারে আলাদা শেলফ করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়েরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশীষ কুমার সরকারও বক্তব্য দেন।