১৬৪৩০ নম্বরে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা

দুঃস্থদের আইনি সহায়তা দিতে জাতীয় হেল্পলাইনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2016, 09:18 AM
Updated : 28 April 2016, 09:22 AM

এখন থেকে ১৬৪৩০ নম্বরে ডায়াল করে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা নিতে পারবেন দরিদ্র ও দুঃস্থরা।

জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই সেবার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে যেন আইনি সেবা পৌঁছায়- তা নিশ্চিত করতে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।”

অসহায়-দরিদ্র মানুষকে যাতে আইনি সহায়তার জন্য অর্থ খরচ করতে না হয়- সে দায়িত্বও সরকার নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই, সর্ব ক্ষেত্রে একটা জবাবদিহিতা থাকবে এবং দেশটা সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হবে। সামাজিক বৈষম্য দূর হবে।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার হেল্প লাইন কল সেন্টারে ফোন করে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সেবা সম্পর্কে জানতে চান।

প্রধানমন্ত্রী: আপনারা কী কী সেবা দিয়ে থাকেন?

হেল্পলাইন: নারীসহ সব ধরনের মানুষের যে কোনো আইনগত পরামর্শ ও সেবা দিয়ে থাকি। ৬৪টি জেলার লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে আইনগত পরামর্শ প্রদান করে থাকি আমরা। বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি, মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবী নিয়োগ, ডিএনএ টেস্টের ব্যয় পরিশোধসহ মামলার ব্যয় পরিশোধ করে থাকে লিগ্যাল এইড অফিস।

প্রধানমন্ত্রী: এছাড়া আর কী কী ধরনের সেবা; বিশেষ করে যারা একেবারে অসহায়, দরিদ্র... সব থেকে বেশি অসহায়ত্ব বোধ করে তো আমাদের দেশের মেয়েরা...  হেল্পলাইনের মাধ্যমে কী কী ধরনের পরামর্শ তারা পেতে পারে?

হেল্পলাইন: হেল্পলাইনের মাধ্যমে দেওয়ানি, ফৌজদারি, পারিবারিক যে কোনো বিষয়- যা আইনের সাথে সম্পৃক্ত; সে বিষয়ে যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, আমরা সে বিষয়ে তথ্য দিতে পারি। যে কোনো নারী, বা শিশু নির্যাতনের শিকার হলে লিগ্যাল এইড অফিসে সরকারি খরচে আইনি সহায়তা পেতে পারেন। তার মামলার যাবতীয় ব্যয় সরকার বহন করে।

প্রধানমন্ত্রী: অনেকেই হয়তো মামলা মোকদ্দমা করতে চায় না। সমঝোতায় আসতে চায়। হেল্পলাইন কী তাদের সেভাবে কোনো পরামর্শ দেবে?

হেল্পলাইন: হেল্পলাইন থেকে কাউন্সেলিংও করা হয়। অনেক সময় অনেকে মামলা করতে চান না। তারা পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে চান। আমাদের এখানে যারা বসেন, তাদের সবারই আইনের উচ্চতর শিক্ষা আছে। তারা পরামর্শ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী: যখন ডিএনএ টেস্ট করতে হবে; হয়তো অনেকেই ডিএনএ টেস্টের খরচ দিতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে হেল্পলাইনকী ধরনের সাহায্য করবে?

হেল্পলাইন: হেল্পলাইনের মাধ্যমে তিনি জানতে পারবেন- কোথায় গেলে ডিএনএ টেস্টের খরচ থেকে শুরু করে মামলা দায়েরের তথ্য জানা যাবে। আমরা তাকে লিগ্যাল এইড অফিসের নম্বর ও ঠিকানা দিয়ে দেব। আবার আমাদের লিগ্যাল এইড অফিসকেও আমরা বলে দেব, ওই নম্বার থেকে একজন সেখানে যাবে। দরিদ্র একজন মানুষ যদি এ ধরনের সেবা চায়, তখন লিগ্যাল এইড অফিস তাকে সেই সেবা দেবে।

কলসেন্টারে কথা বলার পর প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, দেশের বহু মানুষ এই হেল্পলাইনের সুবিধা পাবে।

জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা থেকে সেবা পেয়েছেন এমন দুজন ব্যক্তিও অনুষ্ঠানে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। 

শেখ হাসিনা বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ বলেই জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

দুটি প্রতিষ্ঠানই সমাজে আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ‘উল্লেখযোগ্য অবদান’ রাখছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“নাগরিকরা যেন অন্যায়, অবিচার ও বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি পায়, সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা করে যাচ্ছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও আধুনিক বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আঙ্গীকার থেকেই ২০০৯ সালে তার সরকার ফৌজদারী কার্যবিধি সংশোধন করেছিল।

“আমাদের বিচার বিভাগ যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, এর মাধ্যমে সেটা আমরা সুনিশ্চিত করে দিয়েছি।”

বিচারে দীর্ঘসূত্রতা নিরসনের পদক্ষেপ গ্রহণ, বিভিন্ন আইনের সংস্কার এবং আদালতের বাইরে বিরোধ নিস্পত্তির জন্য ‘বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি কেন্দ্রস্থল’ প্রতিষ্ঠার কথাও তিনি অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।

প্রত্যেক জেলায় লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন এবং লিগ্যাল এইড অফিসারের পদ সৃষ্টি করে বিচারকদের এসব পদে নিয়োগ দেওয়ার কথাও তিনি মনে করিয়ে দেন।

বিনামূল্যে আইনি সেবা পাবেন কারা?

আর্থিকভাবে অসচ্ছল যে কোনো ব্যক্তি, যার বার্ষিক গড় আয় পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশি নয়, কর্মক্ষম নন বা আংশিক কর্মক্ষম, কর্মহীন বা ৭৫ হাজার টাকার নিচে বার্ষিক আয়- এমন মুক্তিযোদ্ধা, সরকারের বয়স্ক ভাতা পান- এমন ব্যক্তি এবং ভিজিডি কার্ডধারী দুঃস্থ মায়েরা আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সাহায্য পেতে পারেন।

২০০৯ সাল থেকে ২০০১৪  পর্যন্ত সময়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ১৮৮ জন এই সংস্থা থেকে আইনি সহায়তা নিয়েছেন বলে সরকারের তথ্য।    

কারাগারে যারা ‘বিনা বিচারে’ আটক আছেন, তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার  নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, “যারা বছরের পর বছর কারাগারে বিনা কারণে বন্দি হয়ে আছে, তাদের বিরুদ্ধে হয়তো সেরকম মামলা নেই, কিন্তু তাদের সহায়তা দিলেই কিন্তু তারা মুক্তি পেতে পারে।

“সে ব্যবস্থাটাও আমরা নিতে পারি। এ উদ্যোগটা নেওয়া প্রয়োজন।”

বাংলাদেশের সংবিধানে সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার বিধান বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতার কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে খুনীদের দায়মুক্তি দেওয়ার ঘটনা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “পিতা-মাতার হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকার আমাদের কারো ছিল না। সেটা হচ্ছে সবচেয়ে দুঃখজনক।”

পঁচাত্তর পরবর্তী শাসকদের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ‘খুনীদের’ পুনর্বাসনের কথাও তিনি তুলে ধরেন।