ইউনূস সেন্টারের প্রতিক্রিয়া, জবাব দিল ডেইলি কলার

নোবেলজয়ী বাংলাদেশি মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠানকে হিলারি ক্লিনটনের তহবিল জোগানোর খবরের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইউনূস সেন্টারের বক্তব্যকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্র ডেইলি কলার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2016, 03:40 PM
Updated : 22 April 2016, 05:06 AM

পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদের প্রভাব খাটিয়ে হিলারির ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার জোগানোর খবর গত ১৭ এপ্রিল ডেইলি কলার দেওয়ার পর তার ভিত্তিতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

তার প্রতিক্রিয়া ইউনূস সেন্টার জানানোর পর সেই বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ওয়াশিংটনভিত্তিক সংবাদপত্রটিকে জানালে তারা ই-মেইলে প্রতিক্রিয়া পাঠায়।

স্বার্থের সংঘাত ঘটিয়ে হিলারির ওই অর্থ জোগানোর প্রতিবেদন প্রকাশের সময় গ্রামীণ ফাউন্ডেশন, যুক্তরাষ্ট্র বক্তব্য জানাতে রাজি হয়নি বলে ডেইল কলারের প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল।

খবর ছাপা হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে ইউনূস সেন্টারের প্রতিক্রিয়া পেয়ে তাকে ভিত্তিহীন দাবি করে সংবাদপত্রটি বলেছে, অনেক ক্ষেত্রে তাদের নীরবতা ও এড়িয়ে যাওয়া উদ্বেগের বিষয় হওয়া উচিত।

ডেইলি কলার তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলেছিল, ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের পদ হারানোর পর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তার নানা প্রতিষ্ঠানকে ইউএসএআইডিসহ ১৮টি সংস্থার মাধ্যমে অনুদান, ঋণ কিংবা কাজ হিসেবে রাষ্ট্রীয় ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার পাইয়ে দেওয়া হয়।

বিপরীতে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে ইউনূসের এক লাখ থেকে তিন লাখ ডলার দান করার কথাও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল।

ইউনূস সেন্টারের প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, ডেইলি কলারের প্রতিবেদনটি পাঠকদের মধ্যে ‘ব্যাপক ভুল বোঝাবুঝির’ সৃষ্টি করেছে।

এ বিষয়ে ডেইলি কলারের বক্তব্য হচ্ছে, প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে গ্রামীণ ফাউন্ডেশন, যুক্তরাষ্ট্র বা ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে অনুরোধ করা হলে তারা সাড়া দেননি।

“ইউনূস নিজেও আমাদের সাক্ষাৎকারের অনুরোধে সাড়া দেননি,” ই-মেইলে জানায় ডেইলি কলার।

ইউএসএআইডি যে অর্থ দিয়েছিল তা প্রধানত চুক্তি ও বিনিয়োগ এবং ছোট একটি অংশ অনুদান ছিল বলে ইউনূস সেন্টারের দাবিও নাকচ করেছে নিউজ পোর্টালটি।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবসাইটকে উদ্ধৃত করে তারা বলছে, গ্রামীণ ফাউন্ডেশন, যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া ১৮টির মধ্যে ১২টি অর্থায়ন ছিল অনুদান এবং কেবল তিনটি ছিল ঋণ।

ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, “অধ্যাপক ইউনূসকে অনুদান, চুক্তি ও ধার হিসেবে এক কোটি ৩০ লাখ ডলার স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে দেওয়া হয় বলে প্রতিবেদনে সম্পূর্ণ ভুলভাবে জানানো হয়। স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই ধরনের কাজের কোনো এখতিয়ার নেই।”

এ বিষয়ে ডেইলি কলারের বক্তব্য হচ্ছে,‍ ‍“আমাদের প্রতিবেদনে বলা হয় তহবিলটি দেওয়া হয়েছিল ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট থেকে, যা স্টেট ডিপার্টমেন্টেরই একটি বর্ধিত অংশ।”

তারা বলছে, ক্লিনটন ফাউন্ডেশন তাদের ওয়েবসাইটজুড়ে ইউনূসের অতি প্রশংসা করেছে। ‍

ঢাকা সফরের সময় মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে হিলারি ক্লিনটন (ফাইল ছবি)

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনূসের সঙ্গে ক্লিনটন পরিবারের ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ২০০৯ সালে হিলারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মানে ভূষিত করা হয়।

গ্রামীণ ব্যাংককে ইউরোপের দেওয়া তহবিল সরানোর অভিযোগ উঠার প্রেক্ষাপটে বয়সসীমা অতিক্রমের কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালে ইউনূসকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরানোর পর হিলারির ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এসেছিল।

ইউনূসকে সরানোর কারণে অন্য দেশ থেকে চাপ এসেছিল বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরে বিভিন্ন সময়ে বলেছেন। গত বছর হিলারির ফাঁস হওয়া ই-মেইলেও তার এই তদ্বির চালানোর বিষয়টি প্রকাশ পায়।

অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে ইউনূস হেরে যাওয়ার পর থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ইউনূসের শীতল সম্পর্ক চলছে।

এই প্রেক্ষাপটে হিলারি যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হতে অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টিঘেঁষা ডেইলি কলার ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ১৩৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে ‘স্বৈরাচারী কায়দায়’ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন ‍তুলেছে ডেইলি কলার।

সেনা-নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ‘সামরিক কর্মকর্তাদের দিকে ইউনূসের অতি আগ্রহ’ নিয়ে কিছু বলা থেকেও ইউনূস সেন্টার নীরব থেকেছে বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্রটি।

ই-মেইলে আরও বলা হয়েছে, “মুহাম্মদ ইউনূসকে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাইয়ে দিতে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ব্যক্তিগতভাবে নোবেল কমিটির কাছে যে ব্যাপক লবিং চালিয়েছিলেন, সে বিষয়েও ইউনূস সেন্টার কিছু বলেনি।”

লাভজনক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানসহ ইউনূস যে বিশাল ‘ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলেছেন সে বিষয়েও ইউনূস সেন্টারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তারা।

ডেইলি কলার আরও বলেছে, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের করা তদন্তের সমালোচনা করে হিলারি যে ‘নজিরবিহীন হস্তক্ষেপ’ করেছে, সে বিষয়েও ইউনূস সেন্টার কিছু বলেনি।

প্রতিক্রিয়ায় সংবাদপত্রটি বলেছে, ক্লিনটন পরিবারের সঙ্গে ইউনূসের যে গভীর সম্পর্ক ছিল, তা বর্তমানে এফবিআইয়ের তদন্তেও রয়েছে।