‘আর্সেনিক থেকে ২ কোটি মানুষকে রক্ষায় সরকার ব্যর্থ’

বাংলাদেশে এখনও ২ কোটি মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে দাবি করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, সরকার এক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2016, 03:49 PM
Updated : 6 April 2016, 03:49 PM

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটির তুলে ধরা এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ওই প্রতিবেদন প্রণেতা রিচার্ড পিয়ারহাউস বলেন, “আন্তর্জাতিক মহলের প্রাথমিক নজরে আসার প্রায় বছর বিশেক পরেও বাংলাদেশে অন্তত দুই কোটি মানুষ আর্সেনিক দূষণের মাত্রা (প্রতি লিটারে ৫০ মাইক্রোগ্রাম) ছাড়িয়ে যাওয়া পানি পান করছেন।

“যাদের বসবাস প্রধানত গ্রামাঞ্চলে। আর সরকার গ্রামীণ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিশুদ্ধ পানিতে প্রাকৃতিকভাবে সংঘটিত আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধে পর্যাপ্ত সাড়া দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে।”

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জ্যেষ্ঠ গবেষক পিয়ারহাউস বলেন, আর্সেনিক দূষণজনিত রোগে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪৩ হাজার লোক মারা যায়।

“প্রাথমিকভাবে, সরকার মানুষের ত্বকের ক্ষত থেকে আর্সেনিক দূষণজনিত রোগ শনাক্ত করছে, যদিও তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিপূর্ণতা পায় না। আক্রান্তদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই রয়েছেন ক্যান্সার, হৃদরোগ ও ফুসফুসের রোগের ঝুঁকিতে। কিন্তু অনেকেই কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পান না।”

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আর্সেনিকজনিত রোগ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে এমন মানুষ, পাঁচটি গ্রামে সরকারিভাবে নিয়োগকৃত নলকূপের তত্ত্বাবধায়ক, সরকারি কর্মকর্তা ও এনজিও কর্মকর্তাসহ ১৩৪ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে এবং ২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত স্থাপিত প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার সরকারি সুপেয় পানির পয়েন্ট সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

পিয়ারহাউস বলেন, বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে অধিকাংশ অগভীর হস্তচালিত নলকূপের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া গেছে। গভীর নলকূপ ভালো মানের পানিস্তরে পৌঁছাতে সক্ষম, কিন্তু যেসব অঞ্চলে অর্সেনিক দূষণের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে সেসব এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপন সরকারি কর্মসূচিতে প্রাধান্য পায়নি।

২০০৬ সাল থেকে আর্সেনিকের ক্ষতি পোষানোর প্রচেষ্টায় ভাটা পড়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

পিয়ারহাউস বলেন, আর্সেনিকের বেশি ঝুঁকিতে থাকা এলাকার বিপরীতে জাতীয় ও স্থানীয় রাজনীতিকরা কম ঝুঁকির এলাকায় নিজেদের সমর্থকদের মধ্যে গভীর নলকূপ বরাদ্দ দিচ্ছে।

“এটা চলতে থাকলে নিরাপদ পানি সরবরাহে সরকারের অঙ্গীকারের প্রতি জনগণের এখনও যেটুকু আস্থা রয়েছে, তা শেষ হয়ে যাবে।”

আর্সেনিক সমস্যা মোকাবেলায় সরকার ও দাতাগোষ্ঠী যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে প্রতিরোধযোগ্য এই দূষণজনিত রোগে লাখ লাখ বাংলাদেশি মারা যাবে বলে আশঙ্কার কথা জানান তিনি।

আর্সেনিক দূষণ প্রশমনে সঠিক পরিবীক্ষণ ও মাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

“সংখ্যায় কম হলেও উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, সরকার কর্তৃক সম্প্রতি স্থাপিত নলকূপসমুহেও জাতীয় মানদণ্ডে সহনীয় মাত্রার ওপরে আর্সেনিক দূষণ পাওয়া গেছে। পুনপরীক্ষিত নলকুপের অন্তত ৫ শতাংশেও নলকুপে বাংলাদেশের সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিক দূষণ রয়েছে।”

“বিশ্ব ব্যাংকের উচিত ত্বরিতগতিতে ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এর পানি পরীক্ষা করা, যদি কোনোটিতে দূষিত পাওয়া যায়, তাহলে তা প্রতিস্থাপন অথবা পুনর্বাসিত করা,” বলেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক।