মুখোশ-ভুভুজেলা নিষিদ্ধ, বৈশাখী উৎসবে সময়ের বেড়া

গতবছর বর্ষবরণের উৎসবে নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনার পর এবারও পহেলা বৈশাখের সব অনুষ্ঠান বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে বলেছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2016, 07:58 AM
Updated : 3 April 2016, 12:00 PM

বাংলা পঞ্জিকার নতুন বছরের প্রথম দিন সন্ধ্যা ৬টার পর ‘রাস্তা পরিষ্কার করতে’ মাঠে নামানো হবে পুলিশ।

মুখোশে মুখ ঢেকে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ এবং ভুভুজেলা বা বিকট আওয়াজের বাঁশি ব্যবহারেও এসেছে কড়াকড়ি। 

আগামী ১৪ এপ্রিল বঙ্গাব্দ ১৪২২ এর প্রথম দিনের উৎসব ‘সুষ্ঠুভাবে উদযাপনে’ সচিবালেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকের পর রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের এসব নির্দেশনার কথা বলেন।

তিনি বলেন, “মানুষের এই উৎসাহ উদ্দীপনায় আমরা বাধা দিতে পারছি না। কিন্তু, আমরা অনুরোধ করছি, ৫টার মধ্যে সব শেষ করতে হবে। ৬টার মধ্যে আমাদের পুলিশ, আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের এই সমস্ত পাবলিক প্লেস ক্লিয়ার করার জন্য সচেষ্ট থাকবেন এবং করার ব্যবস্থা নেবেন।”

মন্ত্রী বলেন, সবাই যাতে নির্বিঘ্নে বৈশাখী উৎসব করতে পারে- সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য যা যা করার সবই করা হবে।

“ভুভুজেলা বিকট একটা আওয়াজ করে। এই বিকট আওয়াজের বাঁশি... এইটা নিষিদ্ধ হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা... এবার, এই যে ছোট ছোট মুখোশ দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেওয়া... তারপর ইসে বের হয়- এটা আমরা এবার নিয়ন্ত্রণ করব।”

৫০০ বছর আগে আকবরি আমলে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য এই বর্ষগণনা পদ্ধতির প্রবর্তন করা হয়েছিল। কালক্রমে সেই বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ বাঙালির সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।

গত চার দশক ধরে রাজধানীতে বর্ষবরণের মূল আয়োজন হয়ে উঠেছে রমনা বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতী অনুষ্ঠান। আর চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা এই উৎসবের অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ।

গ্রেগরীয় পঞ্জিকার ১ জানুয়ারি নতুন বছর আসার আগের রাতে ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ নির্বিঘ্ন করতে প্রতিবছরই সন্ধ্যার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষে করতে বলা হয়, রাতে উৎসব-সমাবেশে থাকে কড়াকড়ি।

পহেলা বৈশাখের মূল আনুষ্ঠানিকতা দিনের প্রথম ভাগে হয় বলে বাঙালির বর্ষবরণ উৎসবে আগে সন্ধ্যার কড়াকড়ি থাকতো না।

তবে বিএনপি জোটের টানা অবরোধ-হরতালে ব্যাপক নাশকতার পর গতবছর উন্মুক্ত স্থানে বর্ষবরণের সব অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে বলে পুলিশ।

এরপরও সন্ধ্যার আগে আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে ভিড়ের মধ্যে একদল যুবক নারীদের ওপর চড়াও হয়। পুলিশের উপস্থিতির মধ্যে ওই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিভিন্ন ছাত্র ও নাগরিক অধিকার সংগঠন। 

পরে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও থেকে আট নিপীড়কের ছবি পাওয়া গেলেও তাদের মধ্যে কেবল একজনকেই এ পর্যন্ত গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। সর্বশেষ গত মার্চে পুলিশের তদন্ত ব্যুরোকে এ মামলা তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে আদালত।

সারা দেশে বর্ষবরণের উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জেলা প্রশাসকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন।

পুলিশ মহাপরিদর্শক, র‌্যাবের মহা পরিচালক ছাড়াও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি এবং ঢাকা সিটি করপোরেশন ও সেবামূলক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এ সম্পর্কিত খবর