ফের সড়ক অবরোধ করে তনু হত্যার প্রতিবাদ

কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর খুনি গ্রেপ্তারের দাবিতে ফের রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2016, 08:11 AM
Updated : 30 March 2016, 05:20 AM

সারাদেশে আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত এই অবরোধ চলার সময় সেনাবাহিনীর এক চিকিৎসক কর্মকর্তার স্ত্রীর গাড়িও আটকে দেওয়া হয়।

অফিস ছুটির এই সময় তিন ঘণ্টা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়ে চলাচল বন্ধ থাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।

বিকাল ৪টায় শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে যাওয়ার পর গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন ডিএমপির রমনার জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. ইব্রাহীম খান।

শাহবাগে বিক্ষোভের সময় একই দাবিতে বাড্ডার আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নেয়।

বেলা দেড়টার দিকে তারা সড়কে নেমে তনুর খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে স্লোগান শুরু করলে যান চলাচল আটকে যায়। তখন পুলিশ যায় সেখানে।

বাড্ডা থানার ওসি এম এ জলিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ গিয়ে শিক্ষার্থীদের সড়ক ছেড়ে যেতে অনুরোধ করলে ১০ মিনিটেই তারা সরে যান।”

গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় নিজের বাসার কাছে ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনু খুনের পর থেকে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে। ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এক সপ্তাহ গড়ালেও এই কলেজছাত্রীর খুনি গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোববার শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেছিল।

তার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বেলা ১টার ‍দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী শাহবাগ মোড়ে গোল হয়ে অবস্থান নিয়ে স্লোগান শুরু করে।

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে এই কর্মসূচিতে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের সক্রিয় দেখা যায়। কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেয় তাদের সঙ্গে।

ভিকারুননেসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, ঢাকা কলেজ, উদয়ন স্কুল ও কলেজ, নটরডেম কলেজ, ইব্রাহীম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা কর্মসূচিতে সংহতি জানায়। ঢাকাস্থ বৃহত্তর মুরাদনগর ছাত্র কল্যাণ পরিষদ, জাগরণের আহ্বানসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেয়।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী সাদিক রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নয় দিন অতিবাহিত হলেও হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে প্রশাসন দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। এধরনের বিলম্ব ও তদন্তে ধীরগতির কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারে।”

সোয়া ১টার দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসক মেজর জেনারেল হারুন অর রশিদের স্ত্রী অধ্যাপক সুমাইয়া জেবিনের গাড়ি শাহবাগ অতিক্রমের সময় আটকে দেয় শিক্ষার্থীরা। অধ্যাপক সুমাইয়া ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক।

পুলিশ গাড়িটি বের করতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়। তখন পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে শিমুল নামে এক শিক্ষার্থী আহত হন।

এসময় বিক্ষোভকারীরা স্লোগান তোলেন ‘ক্যান্টনমেন্টের ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখা যাবে না, ‘জলপাই রংয়ের ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখা যাবে না’।

পরে দুপুর সোয়া ২টার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে পুলিশ ওই চিকিৎসকের গাড়িটি বের করে।

পুলিশ কর্মকর্তা ইব্রাহীম সাংবাদিকদের বলেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে গাড়িটি ছাড়া হয়েছে। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশের উপর চড়াও হয়, তবে পরিস্থিতি শান্ত ছিল।”

এরপর পৌনে ৩টার দিকে বাইসাইকেলে আজিজ মার্কেটের দিকে যাওয়ার পথে কলেজ শিক্ষার্থীদের মারধরের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহুল।

বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীরা একটি গাড়ি ভাংচুর করে বলে এডিসি ইব্রাহীম জানান।

বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শাহবাগ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। বাংলামটর হয়ে শাহবাগে ফিরে অবরোধ কর্মসূচি শেষ করেন তারা।

বিক্ষোভে যোগ দেওয়া ইব্রাহীম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী অরিজিত দত্ত বলেন, “তনু হত্যার বিচার হওয়া প্রয়োজন। এ ধরনের ঘটনা এখন প্রতিনিয়ত ঘটছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাটা তাই এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

“আমি আশা করব, প্রধানমন্ত্রী নিজেও একজন নারী ও মা; সুতরাং তিনি খুব দ্রুত তনুর হত্যার বিচারসহ সব শিশু ও নারী ধর্ষণের বিচার কাজ করতে পদক্ষেপ নেবেন।”

৩ এপ্রিল ধর্মঘট

অবরোধের মধ্যে দুপুর দেড়টায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দের’ সমন্বয়ক আইন বিভাগের শিক্ষার্থী উজমা তাসরিয়ান তনু হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে ৩ এপ্রিল সারাদেশে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেন।  

তিনি বলেন, “সরকারকে তনু হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম, কিন্তু সরকার সেটা পারিনি। ঘোষিত কর্মসূচিতে আমরা এই শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি।

“আগামী ৩ এপ্রিল সারাদেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট ঘোষণা করছি। এছাড়া ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের বিকাল ৪টায় প্রতিবাদী ছাত্র সমাবেশে অনুষ্ঠিত হবে।”

সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য।