বর্ষবরণে যৌন নিপীড়ন ‘বিষয়ই না’ নৌমন্ত্রীর কাছে

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পহেলা বৈশাখে নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে ‘তেমন বিষয় না’ বলে মন্তব্য করেছেন নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2016, 02:40 PM
Updated : 9 March 2016, 12:42 PM

গত বছরের বহুল আলোচিত এই ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বেসরকারি সংগঠনের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “পহেলা বৈশাখে অনেক মানুষ রাস্তায় থাকি।

“কোটি কোটি মানুষের এই দেশে ঢাকা শহরে প্রায় দুই কোটি মানুষ থাকে। তার মধ্যে এমন কী ঘটনা ঘটেছে একটা সংবাদ হওয়ার মতো ঘটনা। একটা টুকিটাকি ঘটনা হতেই পারে। এতগুলো মানুষের মধ্যে এটা তেমন কোনো বিষয়ই না।”

পহেলা বৈশাখে টিএসসি এলাকায় একদল যুবকের দ্বারা নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটলে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।

সিসি ক্যামেরায় কয়েক যুবকের ছবি ধরা পড়লেও তাদের শনাক্ত করা যায়নি উল্লেখ করে মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পুলিশ। সম্প্রতি একজনকে গ্রেপ্তারের পর মামলাটি পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সিসি ক্যামেরায় নিপীড়কের ছবি

ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক সমালোচক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারকে ‘ব্যর্থ’ প্রমাণের চেষ্টা চালিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন শাজাহান খান।   

জার্মানিতে খ্রিস্টীয় নতুন বছরের অনুষ্ঠানে যৌন হয়রানির ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “উন্নত দেশে এর চাইতে বেশি ঘটে। এর চেয়ে আরও মারাত্মক মারাত্মক ঘটনা ঘটে।”

সড়কে দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে গাড়িচালকদের পক্ষ নিয়ে কয়েক বছর আগে সমালোচনায় পড়া পরিবহন শ্রমিকদের নেতা শাজাহান খান মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের কনফারেন্স কক্ষে নতুন ধারা নামে একটি সংগঠনের ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রধান অতিথি।

নতুনধারার নির্বাহী পরিচালক শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ব্র্যাক বাংকের হেড অব কমিউনিকেশন্স জারা জাবিন, জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের সিইও হেলেন জাহাঙ্গীর ও হাজী সেলিম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ শাহনাজ পারভীন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে নানা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১০ নারীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

.

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বাংলাদেশে নারীদের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে তার প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করা মৌলবাদী শক্তিকে প্রতিরোধ করার আহ্বানও জানান শাজাহান খান।

তিনি বলেন, “এদেশের নারী গার্মেন্ট সেক্টর থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী, পুলিশ.. রেলগাড়ি চালাচ্ছে সম্পূর্ণ দক্ষতার সাথে। তাহলে আমরা কেন তাদের পিছিয়ে রাখব।

“নারীকে পিছিয়ে রাখতে চায় কারা, যারা এই সমাজের অগ্রযাত্রায় বিশ্বাস করে না, যারা অধিকারকে বিশ্বাস করে না, যারা ধর্মের নামে নারীদের গৃহবন্দি করে রাখতে চায়।”

“দেখেন, আহমদ শফী হেফাজতে ইসলামে আমির, তিনি কী বলেছিলেন? নারীদের তেঁতুলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। অভিভাবকদের বলেছেন কোনো মেয়েদের ক্লাস ফোরের বেশি পড়ানো যাবে না। তার মানে ঘর থেকে তাদের বেরুনো নিষেধ।”

“আর একটি কথা বলেছিল, মেয়েদের অসুখ হলে পরে মহিলা ডাক্তার দেখতে হবে। আমার প্রশ্ন হল, মেয়েরা যদি শিক্ষাই না পায়, তাহলে ডাক্তার হবে কোথা থেকে। এরকম অদ্ভুত ধরনের ফতোয়া এদেশের কিছু কিছু মাওলানা দিয়ে থাকেন,” বলেন মন্ত্রী।