রামপুরার দুই শিশুকে খুন করেছেন মা: র‌্যাব

ঢাকার রামপুরায় দুই ভাই-বোনকে হত্যার কথা তাদের মা স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেছে র‌্যাব। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2016, 05:25 AM
Updated : 3 March 2016, 07:16 AM

এ বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান বৃহস্পতিবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদের মা মাহফুজা মালেক জেসমিন পরিকল্পিতভাবে সন্তানদের হত্যার কথা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।”

দুই শিশুর বাবা তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী আমানুল্লাহ কোনোভাবে এ ঘটনায় জড়িত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নই। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পরে সংবাদ সম্মেলন করে তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে বলে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান।

কেন মা তার সন্তানদের হত্যা করেছেন- এই প্রশ্নে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাধারণত এই জাতীয় হত্যাকাণ্ডের পেছনে পারিবারিক বিরোধ বা মানসিক অশান্তির বিষয় থাকে। এ ঘটনাটি কী কারণে হয়েছে তা সংবাদ সম্মেলনে জানানো হবে।”

অবশ্য র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখা থেকে সংবাদকর্মীদের পাঠানো এক এসএমএসে বলা হয়, “পারিবারিক জটিলতার জের ধরে ২৯ ফেব্রুয়ারি অনুমানিক বিকাল ৫টার দিকে রামপুরার বনশ্রীর বাসায় দুই শিশুকে হত্যা করেন তাদের মা।”

ওইদিন রাতে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ছাত্রী নুসরাত জাহান অরণী (১৪) ও তার ছোটভাই আলভী আমানকে (৬) অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

চাইনিজ রেস্তোরাঁ থেকে আনা খাবার খেয়ে শিশু দুটির মৃত্যুর সন্দেহের কথা পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হলেও পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তে মেলে হত্যাকাণ্ডের আলামত।

এরপর বুধবার জামালপুর থেকে শিশু দুটির বাবা, মা ও খালাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় নিয়ে আসে র‌্যাব। তখন থেকে তারা র‌্যাব হেফজতেই আছেন।  

দুই শিশুর মামা জাকির হোসেন সরকার বৃহস্পতিবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল র‌্যাব তিনজনকে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। তারা কী অবস্থায় আছে তাও আমরা জানি না।”

অরণী ও আলভীর মৃত্যুর ঘটনা ‘এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না’ জানিয়ে জাকির বলেন, “আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।”

পুলিশের হাতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন

অরণী এবং আলভীর মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে পুলিশ। প্রতিবেদনে দুই শিশুর শরীরে আঘাতের চিহ্ন, গলায় আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে রামপুরা থানার এসআই সুব্রত বিশ্বাসের কাছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয় বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দুই ভাই-বোনের ‘মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়নি’ বলে জানান এ চিকিৎসক।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ওই (প্রতিবেদনে) জায়গাটি খালি রাখা হয়েছে। ভিসেরা প্রতিবেদন পেলে চূড়ান্ত মতামত দিতে পারব।”

সোহেল জানান, ময়নাতদন্তে দুই শিশুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও গলায় আঙ্গুলের ছাপ পাওয়া গেছে।

“এছাড়া নাক-মুখ চাপা দেওয়ার লক্ষণ পেয়েছি। প্রতিবেদনে এ বিষয়গুলো উল্লেখ করেছি।”

সাধারণত ভিসেরা প্রতিবেদন পেতে এক-দেড় মাস লাগলেও আলোচিত এই ঘটনার ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

খাবারে বিষক্রিয়ার অভিযোগ আসার পরিপ্রেক্ষিতে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে।

গত মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেলে ময়নাতদন্তে দুই শিশুকে হত্যার আলামত মেলে।

ওইদিন চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ দুটি বাচ্চার গলায় ‘দাগ’ এবং আঙুলের ছাপ পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

এছাড়া তাদের থুতনিসহ বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন এবং দুজনেরই জিহ্বায় কামড় লেগে ছিল বলে জানিয়েছিলেন তিনি।