১৫ মার্চের মধ্যে ভাড়াটিয়াদের তথ্য চায় ডিএমপি

ঢাকার নাগরিকদের তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে সব বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য ১৫ মার্চের মধ্যে সংগ্রহ করা হবে বলে জানিয়েছে মহানগর পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Feb 2016, 08:56 AM
Updated : 29 Feb 2016, 03:25 PM

সোমবার বিট পুলিশিং নিয়ে মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এ কথা জানান।

তিনি বলেন, “রাজধানীর সব বাসায় ফরম পাঠানো হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে অনেক ফরম ফেরত পেয়েছি, অনেক ফরম পাইনি। আমাদের অফিসাররা কাজ করছেন।

“আমরা আশা করছি, ১৫ মার্চ যে ডেডলাইন আমরা দিয়েছি, তার মধ্যে সব ফরম আমরা পেয়ে যাব। এরপর আমরা তা ব্যাকআপের কাজ শুরু করব।”

এক পৃষ্ঠার যে ফরম ভাড়াটিয়াদের দেওয়া হচ্ছে, সেখানে ভাড়াটিয়ার ছবির পাশাপাশি তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, ফোন নম্বর, জন্ম তারিখসহ বাসার বাসিন্দা এবং গৃহকর্মী ও ড্রাইভারের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “মানুষ মনে করছে, আমার তথ্য আমি পুলিশকে দেব... আবার না কোন হয়রানির শিকার হই।”

এ বিষয়ে নগরবাসীকে আশ্বস্ত করতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

সম্মেলনে বিট পুলিশিং এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ডিএমপি কমিশনার। ডিএমপি গত বছরের নভেম্বর থেকে রাজধানীতে এই বিট পুলিশিং কার্যক্রম শুরু করেছে।

অপরাধ দমনে নির্দিষ্ট কোনো এলাকার কমিউনিটিকে একজন পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্বে যুক্ত করে পরিচালিত কার্যক্রম বা নীতি হচ্ছে বিট পুলিশিং।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “ঢাকার পরিধি বাড়ছে। সেই সাথে জনসংখ্যাও বাড়ছে। এর সাথে তাল মিলিয়ে ঢাকা মহানগরকে নিরাপদ করতে এবং সম্মানিত নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি। তারই অংশ হিসেবে আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন বিট পুলিশিং।”

কমিউনিটির সকল মানুষকে একীভূত করে মত বিনিময় করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তাবায়নে, অপরাধ দমনে এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রমে মাধ্যমে সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের মাধ্যমে একটি টেকসই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সৃষ্টি করাই বিট পুলিশিং এর উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি।

রাজধানীতে মোট ২৮৭টি বিট সৃষ্টি করা হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান বলেন, “প্রতিটি বিটে একজন উপপরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে অন্যান্য পদমর্যাদার পুলিশ সদস্য থাকবে।

“বিটের অফিসারের কাজ হচ্ছে ওই বিটের প্রত্যেকটি মানুষকে চেনা- উঠান বৈঠকের মাধ্যমে, ব্যক্তি যোগাযোগের মাধ্যমে, ছোট ছোট বৈঠকের মাধ্যমে সবার সাথে পরিচিতি হওয়া এবং তথ্য বিনিময় করা।”

ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, “প্রতিদিন ঢাকা শহরে অসংখ্য মানুষ আসছে। যার যেখানে ইচ্ছা বাসা ভাড়া নিচ্ছে, যার যেখানে ইচ্ছা বসবাস করছে। এর কোনো তথ্য আমাদের (পুলিশ) কাছে ছিল না।

“কিন্তু আজকে অপরাধে মাত্রা ও প্রক্রিয়া এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে- আমরা (পুলিশ) মনে করি কার্যকরভাবে এটা নিয়ন্ত্রণ করা জন্য মহানগরীতে বসবাসরত মালিক-ভাড়াটিয়া যারা আছেন, তাদের সকলের জননিরাপত্তার স্বার্থে একটি তথ্যভাণ্ডার দরকার।”

এজন্য ডিএমপি’র তৈরি করা একটি ফরম পুলিশ কর্মকর্তারা প্রত্যেকটি বাসায়, প্রতিষ্ঠানে, দোকানে, অফিসে ও স্থাপনায় পৌঁছে দিচ্ছে বলে জানান ঢাকা মহানগরীর এই প্রধান পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, “এই ফরমটি পূরণ করা হলে মহল্লাভিত্তিক, বিট ভিত্তিক, রোড ভিত্তিক, হোল্ডিং ভিত্তিক আমরা ডাটাবেজ তৈরি করব। এটির সফট ও হার্ড কপি দুটি আমরা তৈরি করব।

“এই তথ্য আমরা নিচ্ছি নগরবাসীর নিরাপত্তা বিধানের জন্য। এই তথ্য সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে, সংরক্ষিত থাকবে। অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। এতে একটি মহল্লাতে কারা বসবাস করে, কারা বাড়ির মালিক, কারা দোকানের মালিক, কারা প্রতিষ্ঠানের মালিক আর কারা ভাড়াটিয়া- তাদের তথ্য আমাদের কাছে সংগৃহীত থাকবে।”

এসব তথ্য থাকায় নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের সহজতর হয়ে যাবে বলে মনে করেন আছাদুজ্জামান মিয়া।

“প্রতিটি এলাকায় কতজন বিদেশি নাগরিক থাকে, কতজন পেশাজীবী, রাজনীতিবিদ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ তা জানা যাবে আর কতটি মসজিদ, মন্দিন, গীর্জা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালতের ঠিকানা থাকবে আমাদের কাছে। তাহলে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের কাছে সহজতর হয়ে যাবে।”

সাম্প্রতিক সময়ে মিরপুরের শাহআলী থানায় এলাকা এবং উত্তর বাড্ডা, মোহাম্মাদপুর ও দক্ষিণখানের কয়েকটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক ও জঙ্গি গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ডিএমপি কমিশনার।

“প্রতিটি ঘটনায় দেখেছি। ওই সব বাসা এক/দুই মাস আগে ভাড়া নেওয়া হয় মিথ্যা নাম দিয়ে, মিথ্যা পেশা দিয়ে এবং নিজেদের পরিচয় গোপন করে বাসা ভাড়া নিয়ে অপরাধ করার চেষ্টা করে। অপরাধ প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর তারা দূরে কোথাও চলে যায়- সেটাও ভাড়া বাসা।

প্রত্যেকটি ভাড়াটিয়ার জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি রাখা সম্ভব হলে এবং থানা থেকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং তদারক করতে পারলে এ ধরনের অপরাধীরা বাসা ভাড়া নিয়ে অপরাধ করতে পারবে না বলে আশা প্রকাশ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

জননিরাপত্তা এবং জনশৃঙ্খলা সহজে নিশ্চিত করতে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়ার এই তথ্য আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে থানায় জমা করে তা মহল্লা ও হোল্ডিং ভিত্তিক করে সাজানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কথা জানান ডিএমপি কমিশনার।

সব সময় এই ডাটাবেজ আপডেট করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “নতুন ভাড়াটিয়া আসালে তার নাম লিপিবদ্ধ হবে; আর চলে গেলে তার নাম কর্তন করা হবে।”

পুলিশের সঙ্গে জনগণের ‘প্রকৃত যোগাযোগের অভাব’ বয়েছে বলে মনে করেন আছাদুজ্জামান মিয়া।

“আইনে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারে ও আইনানুগ কাজ সম্পাদনে জনগণ পুলিশকে সহায়তা করবে। তার ছেয়ে বড় কথা হচ্ছে- প্রত্যেক নাগরিকের একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে।

“অপ্রিয় হলেও সত্য, এখনও মানুষ পুলিশকে সেভাবে বিশ্বাস করতে চায় না। এটার কারণ, আমাদের সাথে জনগণের প্রকৃত যোগাযোগের অভাব। জনগণকে নিয়ে একসাথে কাজ করা গেলে এই পুলিশভীতি দূর হবে। কমে আসবে নানা অপরাধ।”

এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার নগরবাসীর সহযোগিতা চেয়ে যারা এখনও ফরম পাননি তাদের সংশ্লিষ্ট বিট পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য ফরম পূরণ করতে অনুরোধ করেন।