এক মিনিট নীরবতায় অভিজিৎ স্মরণ

এক বছর আগে একুশে গ্রন্থমেলা থেকে ফেরার পথে খুন হওয়া মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়কে এবারের বইমেলা স্মরণ করলো এক মিনিট নীরবতায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2016, 11:11 AM
Updated : 27 Feb 2016, 02:47 AM

বাংলা একাডেমির আয়োজনে শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে মূল মঞ্চ ও মেলা প্রাঙ্গণে নীরবে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়কে স্মরণ করা হয়, যিনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লেখালেখিতে সোচ্চার ছিলেন।

অবশ্য বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ আগে থেকে না জানানোয় অনেকেই এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন প্রকাশকদের কেউ কেউ।

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী অভিজিৎ রায় ছিলেন মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা। গত বছর বইমেলা চলাকালে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে দেশে ফিরে ২৬ ফেব্রুয়ারি খুন হন তিনি।

বইমেলা থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন অভিজিৎ। তার স্ত্রী বন্যাও সন্ত্রাসীর চাপাতির আঘাতে আঙুল হারান।

অভিজিতের স্মরণে বিকাল ৪টায় বাংলা একাডেমিতে বইমেলার মূলমঞ্চের আলোচনা সভার আগে একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান এক মিনিট নীরবতা পালনের ঘোষণা দেন।

এরপর মঞ্চে ও এর সামনের দর্শক-শ্রোতারা দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। তথ্যকেন্দ্র থেকে একই ঘোষণা দিলে সেখানেও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

মূলমঞ্চের সামনে দুই পাশে অভিজিত হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে দুটি ব্যানার টানানো হয়। তাতে লেখা ছিল- “গত বছরের এই দিনে অভিজিৎ রায়ের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করছি।”

তবে আগে থেকে না জানায় অনেকেই এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেননি বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক মাসুম বিল্লাহ জানান।

মেলা প্রাঙ্গণ থেকে তিনি বলেন, “মেলায় আসা বেশিরভাগ মানুষই নীরবতা কর্মসূচি সম্পর্কে আগে থেকে কিছু জানতেন না। তথ্যকেন্দ্র থেকে নীরবতা পালনের ঘোষণা দেওয়ার পরও একাডেমির মূল মঞ্চ থেকে মাইকের আওয়াজ আসছিল।”

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় মেলার ফটক খুলে দেওয়া হয়। আর বিকাল ৪টা থেকেই মূল মঞ্চের কার্যক্রম শুরু হয়।

জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের আগে জানানো হয়নি। আমরা পালন করব কীভাবে?

“বাংলা একাডেমির মাইকের শব্দ এ পর্যন্ত আসেনি। তারা নিজেদের মতো করে এ ধরনের কর্মসূচি নেয়। এ কারণেই আমরা পালন করতে পারিনি।”

এ বিষয়ে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালের সিদ্ধান্ত এটা। কাউকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাইনি, শুধু গণমাধ্যমকর্মীদের জানানো হয়েছিল।”

অভিজিতের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে মেলায় কোনো কর্মসূচি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তার বাবা অধ্যাপক অজয় রায়।

বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছিলেন, “বইমেলায় নিহত লেখক-প্রকাশকদের জন্য কিছু না থাকা প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তখন তিনি এড়িয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন, প্রকাশকরা চাইলে কিছু করতে পারে।

“ওরাতো আসলে চাকরি করে। কোনো কিছু করলে সরকার বিব্রত হবে, তাই এমন কিছু করতে চায় না।”

অভিজিতের মৃত্যুর দিনে প্রকাশকরাও কোনো কর্মসূচি নেননি-এ তথ্য জানালে অজর রায় বলেন, “আসলে সবাই ব্যাপারটিকে এড়িয়ে যেতে চাইছেন। দোষগুলি নিজের গায়ে আসবে ভেবে।”