তার ছেলে নিজামুল হক রানা জানান, তার বাবা রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসকরা লাইফ সাপোর্ট খুলে নেন।
জাতীয় সংসদে ছয়বার হবিগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করা এই আওয়ামী লীগ নেতার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
নিজামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার বাবা দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।মঙ্গলবার রাতে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করার পর আইসিইউতে রাখা হয়েছিল।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান জানান, বিকাল সাড়ে ৪টায় এনামুল হকের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে জাতীয় সংসদের সাউথ প্লাজায়। সেখানে জানাজার পর লাশ বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে।
পরিবার জানায়, শুক্রবার হেলিকপ্টারে করে কফিন নেওয়া নেওয়া হবে হবিগঞ্জে। সকাল সাড়ে ১০টায় হবিগঞ্জ ঈদগাহ মাঠে, দুপুর ২টায় মাধবপুর উপজেলা সদরে, এর পর চুনারুঘাট ঈদগাহ মাঠে ও সব শেষে শায়েস্তাগঞ্জ ঈদগাহে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
জানাযা শেষে প্রয়াত এই আওয়ামী লীগ নেতার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী এসময় এনামুল হকের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা জানান।
এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সহকারী সামরিক সচিব ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও কফিনে শ্রদ্ধা জানান।
জানাজায় ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়াসহ, মন্ত্রীপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
জানাজা শেষে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, প্রধান হুইপ আ. স. ম ফিরোজ এবং বিরোধীদলীয় নেতার পক্ষে বিরোধী দলীয় হুইপ মো. নূরুল ইসলাম ওমর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এনামুল হক মোস্তফা শহীদ ২০১৪ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৩ সালে একুশে পদকপ্রাপ্ত এনামুল হক স্ত্রী মিনু মমতাজ ও দুই ছেলে রেখে গেছেন।
১৯৩৮ সালের ২৮ মার্চ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা ইউনিয়নের কুটিরগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আব্দুল হক পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।
এনামুল হক ১৯৫৬ সালে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি নেওয়ার পর আইন পেশায় নিয়োজিত হন।
তিনি এলাকা শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন; বেশকিছু স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৬’র ৬ দফার আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদান ছিল।
হবিগঞ্জ ভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক এনামুল হক মুক্তিযুদ্ধের সময় হবিগঞ্জ মহকুমা সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের নির্বাহী সদস্য ছিলেন।
১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে এবং ১৯৭৩, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-চুনারুঘাট আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।