কালিহাতীতে সংঘর্ষ: প্রতিবেদনে ১৩ পুলিশের নাম, পদক্ষেপ জানাতে নির্দেশ

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে সংঘর্ষের সময় গুলিতে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে নাম আসা ‘১৩ পুলিশ সদস্যের’ বিরুদ্ধে সুপারিশের আলোকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে- তা জানাতে বলেছে হাই কোর্ট।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2016, 11:12 AM
Updated : 22 Feb 2016, 12:49 PM

৭ মার্চের মধ্যে তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের এই অগ্রগতি পুলিশপ্রধান ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজিকে জানাতে বলা হয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনায় পুলিশের দুটি তদন্ত প্রতিবেদন সোমবার উপস্থাপনের পর বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

শুনানিতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

ছেলের সামনে মাকে ‘ধর্ষণের’ অভিযোগকে কেন্দ্র করে গত ১৮ সেপ্টেম্বর কালিহাতী উপজেলা সদরে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশের গুলিতে চারজনের মৃত্যু হয়।

নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এ ঘটনার জন্য পুলিশকেই দায়ী করছেন। সেসময় পুলিশ বাহিনীর ভারপ্রাপ্ত প্রধান মোখলেছুর রহমান বলেছিলেন, সংঘর্ষের পেছনে ‘তৃতীয় কোনো বিষয়’ থাকতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।

ওই ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী রিট আবেদনটি করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর হাই কোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয়।

সংঘর্ষের সময় গুলিতে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন ৬০ দিনে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ যে ব্যবস্থা নিয়েছিল, তা আইনানুগ হয়েছে কি না- তা জানতে চেয়ে রুল দেওয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি (শৃঙ্খলা), টাঙ্গাইলের ডিসি-এসপিকে চার সপ্তাহে রুলের জবাব ও প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

সোমবার আদেশের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুটি তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৩ জনের বিরুদ্ধে অদক্ষতা, উদাসীনতা ও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ এসেছে।

“সাময়িক বরখাস্তের আদেশসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এই সুপারিশ কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে- তা আইজিপি ও ঢাকা রেঞ্চের ডিআইজিকে ৭ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন আকারে জানাতে বলেছে আদালত।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাজু জানান, ওই ঘটনায় পুলিশ দুটি তদন্ত কমিটি করে। আইজিপি ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।

ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আলী মিয়ার (অপরাধ) নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি ছিলেন চারজন এবং অতিরিক্ত ডিআইজি (শৃঙ্খলা) মো. আলমগীর আলমের নেতৃত্বে অন্য কমিটিতে ছিল তিন সদস্য।

প্রতিবেদন গত ৫ ডিসেম্বর পুলশ সদরদপ্তরে জমা পড়ে, ১৫ ডিসেম্বর হাই কোর্টে আসে; তখন অবকাশ ছিল। এর ধারাবাহিকতায় সোমবার তা আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুলিশের দাখিল করা দুটি প্রতিবেদনএকই ধরনের। এতে কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এই সুপারিশক্রমে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- তা জানাতে বলেছে আদালত।

৯ মার্চ পরবর্তী আদেশের জন্য বিষয়টি তালিকায় আসবে বলে জানান তিনি। 

প্রতিবেদনে ১৩ পুলিশের নাম

অতিরিক্ত ডিআইজি (অপরাধ) মোহাম্মদ আলী মিয়ার অনুসন্ধান প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, ঘটনার সময়কার টাঙ্গাইলের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকারের বিরুদ্ধে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়া, কর্তব্য কর্মে অবহেলার এবং অদক্ষতার অপরাধ হওয়ায় তাকে জেলা থেকে প্রত্যাহার করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

টাঙ্গাইলের (উত্তর) অতিরিক্তি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে উদাসীনতা ও অদক্ষতার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে কম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে বদলি করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলেও সুপারিশ করা হয়েছে।

ফাইল ছবি

সুপারিশে বলা হয়েছে, ওয়াচার কনস্টেবল মো. মাহতাব উদ্দিন জেলা বিশেষ শাখার কালিহাতী থানার ডিএসবি জোন তথ্য গোপনের মাধ্যমে কর্তব্য কর্মে নিষ্ঠা, সততা ও চরম গাফিলতির পরিচয় প্রদান করেছেন বলে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্তপূর্বক বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের করা যেতে পারে।

প্রতিবেদনে কালিহাতী থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. শহীদুল ইসলামের (বর্তমানে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত) বিরুদ্ধে উদাসীনতা, অদক্ষতা, গাফিলতি ও অবহেলার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়েছে।

কালিহাতী থানার এসআই মো. আবুল বাশার, মো. ছলিম উদ্দিন, কনস্টেবল মো. আমিনুল ইসলাম, জিয়াউল হক, তমাল চন্দ্র দেবের বিরুদ্ধে অদক্ষতা, উদাসীনতা, অসদাচরণ, নিষ্ঠা, সততা ও কর্তব্যকর্মে চরম গাফিলতির অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্তপূর্বক কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে।

ঘাটাইল থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. মোখলেছুর রহমানের (বর্তমানে খুলনা রেঞ্জে সংযুক্ত) বিরুদ্ধে অদক্ষতা, অবহেলা, উদাসীনতা ও অসদাচরণের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে অনুসন্ধান কমিটি।

সুপারিশে ঘাটাইল থানার এএসআই মো. হারুন-অর রশিদের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও অদক্ষতার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দূরবর্তী কম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে বদলীপূর্বক যথাবীহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলা হয়েছে।

ঘাটাইল থানার এসআই মো. ওমর ফারুক ও এসআই মো. মুনসুপ আলীর বিরুদ্ধে কর্তব্যকর্মে অবহেলা, অদক্ষতা, উদাসীনতা ও অসদাচরণের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে সাময়িক বরখাস্তপূর্বক অন্যত্র সংযুক্ত করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়েছে।

নয়টি সুপারিশের শেষটিতে ওই ঘটনার তিন মামলা টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তদন্ত করছে জানিয়ে সেগুলো সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার কথা বলা হয়েছে।