বইমেলায় জোড়ার মেলা

রঙিন পোশাক, মাথায় ফুল-একহাত খুঁজে নিয়েছে প্রিয়তমের আরেকটি হাত; রোববার এ দৃশ্যই সবচেয়ে বেশি দেখা যায় অমর একুশে বইমেলায়।

মাসুম বিল্লাহসুলাইমান নিলয় ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2016, 04:41 PM
Updated : 14 Feb 2016, 04:49 PM

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে সময় কাটানো, একে অন্যের পছন্দের জিনিস উপহার-এ ধরনের নানা আয়োজনে ভ্যালেনটাইনস ডে উদযাপনের ঢেউ আছড়ে পড়ে বাঙালির মননের এই মেলায়।

দিনভর রমনা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো নারী-পুরুষ দুপুর গড়াতে হন মেলামুখী।

বিকালের দিকে নগরীর সবপথ যেন মিশে যায় অমর একুশের বইমেলায়; বইয়ের সঙ্গেই দিনের বাকি সময় পার করেন ভ্যালেনটাইনসের অনেক তরুণ-তরুণী।

প্রিয়তমার হাতে হাত রেখে মেলায় ঘুরেছেন, কিনেছেন বই। অনেকে ভালোবাসা দিবসের স্মারক হিসাবে প্রিয়জনের হাতে তুলে দিয়েছেন পছন্দের বই।

আগের দিন পহেলা ফাগুনের রঙচ্ছটা এদিনও ছিল মেলায়; লাল-সবুজ কিংবা হলুদ বর্ণে সেজে কিংবা হাতে-মাথায় ফুলের ফিতা জড়িয়ে অনেকে মেলা প্রাঙ্গণে হাজির হন।

নারী-পুরুষের প্রবেশপথ আলাদা হওয়ায় প্রিয়জনের হাত ছেড়েই মেলায় ঢুকতে হয়; ক্ষণিকের এই বিচ্ছেদ কাটিয়ে আবারও একজনের হাত খুঁজে নেয় অন্যজনকে।

বইয়ের উৎসবে শামিল হওয়া এমনই একটি জুটি জাকারিয়া আলম ও খাদিজা বেগম দম্পতি। বর্ণিল সাজে সেজে বিকেলে ঢাকার শনিরআখড়া থেকে মেলায় আসেন তারা।

একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি জাকারিয়া জানান, সকালে বের হয়ে সারাদিন স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মেলায় আসেন।

“সাধারণত আমাদের একসঙ্গে বের হওয়া হয় না। আজ বেরিয়েছি ভালোবাসা দিবসে।”

স্ত্রীর পছন্দের হুমায়ূন আহমদের বই কিনে বাড়ি ফিরবেন বলে জানান তিনি।

বইমেলায় অধ্যাপক জাফর ইকবাল, সঙ্গে ফুল হাতে স্ত্রী ইয়াসমিন হক। ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে অনেকের হাতেই দেখা যায় লাল গোলাপ।

শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের শিক্ষার্থী হারুন অর রশীদ এসেছেন তার প্রেয়সীকে নিয়ে। ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে তাকে আড্ডা দিতে দেখা গেল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা প্রাঙ্গণে।

হারুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত তিন বছর আমরা এভাবে ভালোবাসা দিবস উদযাপন করি। বিকালে মেলায় আসি। একে অন্যকে বই উপহার দেই। এভাবেই আমাদের এই দিন কেটে যায়।”

তবে জাকারিয়া ও হারুনের চেয়ে ভিন্ন মেজাজের অনেকে ছিলেন মেলায়, অনেক জুটি বক্তব্য দিলেও ‘অজানা শঙ্কায়’ নামপ্রকাশে ছিলেন অনিচ্ছুক।

বইমেলার সঙ্গে ভ্যালেন্টাইনস দিবসের মিশেলে এদিন বই বিক্রি বাড়ায় খুশির কথা জানিয়েছেন প্রকাশনা সংস্থা সংশ্লিষ্টরা।

বিক্রি যেমনই হোক উৎসবটাকে ‘আপন’ করতে চান বলে জানিয়েছেন তাদের কেউ কেউ।

ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশের সত্ত্বাধিকারী আদিত্য অন্তর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে অনেক মানুষ মেলায় এসেছে। বিক্রি ভালো হয়েছে। বিক্রির চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে- এদিন মেলা উৎসবের রূপ নিয়েছে।”

ভ্যালেন্টাইনস উৎসবের এই আমেজের মধ্যে বিকালে বাংলা একাডেমির সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানের ‘কূতর্কে বিতর্কে গণমাধ্যম’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, “গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতে হবে। গণতন্ত্র নির্মাণে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা কখনও শক্তিশালী, আবার কখনও দুর্বল।

“কিন্তু গণমাধ্যম সবসময় শক্তিশালী। রাজনীতিবিদরা ভুল করতে পারে কিন্তু গণমাধ্যম ভুল করতে পারে না।”

সামিয়া রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, লেখক-অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস বক্তব্য দেন।

মাসব্যাপী বইমেলার চতুর্দশ দিন রোববার নতুন বই এসেছে ৯৩টি। মেলার নজরুল মঞ্চ জমজমাট ছিল নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে।

বিকালে মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চা: অতীত থেকে বর্তমান’ শিরোনামের আলোচনা সভা। অধ্যাপক গোলাম মুরশিদের সভাপতিত্বে এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ।

আলোচনায় অংশ নেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক করুণাময় গোস্বামী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন সৈয়দ হাসান ইমাম, সায়েরা হাবীব এবং এ এস এম সামিউল ইসলাম। নৃত্য পরিবেশন করেন ওয়ার্দা রিহাব ও তার দল। এছাড়া কণ্ঠশিল্পী খুরশিদ আলম, মাসুদা নার্গিস আনাম, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সি, শরণ বড়ুয়া, স্বর্ণময়ী মণ্ডল, দেবাশীষ বসাক, নাহিদ নাজিয়া ও সাহিনা গান পরিবেশন করেন।