সুন্দরবনের ‘ঝুঁকি’ দেখতে মার্চে আসছে ইউনেস্কো দল

তেল ও কয়লাবাহী জাহাজডুবির পাশাপাশি রামপাল প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ জানতে ইউনেস্কোর একটি প্রতিনিধি দল আগামী মাসে বাংলাদেশে আসছে।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2016, 07:14 AM
Updated : 13 Feb 2016, 10:45 AM

প্রতিনিধি দলটি তিন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকাবাসী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যম, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুছ আলী।

“সুন্দরবনের আউটস্ট্যান্ডিং ইউনিভার্সেল ভ্যালুস-রক্ষায় আমাদের ম্যানেজমেন্ট পরিকল্পনা কী, তেল ও কয়লা জাহাজডুবির ঘটনায় কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না এবং রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি দেখতে তারা আসবে।”

মার্চে সুবিধাজনক সময়ে অন্তত এক সপ্তাহের জন্য বিশেষজ্ঞ দলটি আসবে বলে ইউনুছ জানান।

দলে সিঙ্গাপুর, কানাডা ও জেনেভার বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। আইইউসিএন-এর একটি প্রতিনিধি দলও তাদের সঙ্গে থাকবে।

সবার সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ইউনেস্কোর সদরদপ্তরে পাঠাবেন বলে জানান সরকারি এ কর্মকর্তা।

দুই বছর আগে তেলের ট্যাংকার ডুবে ঘটে পানি দূষণ

তিনি বলেন, “এটা একটা ইতিবাচক দিক। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে ইউনেস্কোর এ ধরনের উদ্যোগ ভালো।”

তিন সদস্যের এ দল নৌ, জ্বালানি ও খনিজ এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবে বলে জানান ইউনুছ আলী।

“সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌ চলাচল দেখভাল করে নৌ মন্ত্রণালয়। জাহাজডুবির পর সুন্দরবন সংলগ্ন প্রতিবেশ, পানি-মাটি ও মাছের কী ক্ষতি হয়েছে, কী কী আরও হতে পারে, তা নিরূপণে আলোচনা হবে।”

“বিদ্যমান পরিবেশে সম্পদ আহরণ-ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় কী কী উদ্যোগ নিয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হবে; আর জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কাছে রামপাল নিয়ে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করা এবং তা মিটিগেশনের কী উপায়, পদক্ষেপ কী নেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চাইবে তারা।”

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা- ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে বিশ্বের বর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’র তালিকাভুক্ত করে।

সুন্দরবনে রয়েছে হরিণের অবাধ বিচরণ

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে।

চুক্তির পর থেকেই তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তীব্র বিরোধিতা করে আসছে।

তাদের ভাষ্য, এই প্রকল্প সুন্দরবন ও সেখানে থাকা বণ্যপ্রাণীদের জন্য ‘ভয়াবহ হুমকি’র কারণ হয়ে উঠবে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ও উন্নতমানের আমদানি করা কয়লা ব্যবহার করা হবে। এতে সালফার, ফ্লাই অ্যাশ ও অন্যান্য উপাদানজনিত বায়ুদূষণের পরিমাণ ‘ন্যূনতম পর্যায়ে’ থাকবে, যার ফলে পরিবেশের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না।