ছুটির দিনে গমগম বইমেলা, ভিড়-ছুটোছুটি

প্রবেশপথে সাপের মত পেঁচানো দীর্ঘ সারি; ভেতরে কোথাও কোথাও হাঁটা তো দূরে থাক, কদম ফেলার জায়গাও নেই। পছন্দের বই খুঁজে নিতে এর মাঝেই বইপ্রেমীরা ছুটছেন এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2016, 03:02 PM
Updated : 13 Feb 2016, 06:09 AM

একুশে বইমেলা শুরুর দ্বিতীয় শুক্রবার এমন দৃশ্য দেখা গেছে চার লাখ ৭৮ হাজার বর্গফুট বিস্তৃত পরিসরে।

বইমেলার দ্বাদশ দিনের সকালটা শুরু হয়েছিল একটু অন্যরকমভাবে; শিশুপ্রহর ছিল এদিন।

সকাল ১১টায় মেলার প্রবেশপথ খুলে দেওয়ার পরই বাবা-মায়ের কোলে-পিঠে চড়ে বা অভিভাবককে নিয়ে মেলায় হাজির হতে থাকে শিশুরা। বইয়ের খোঁজে ছোট পাঠকদের ছুটোছুটি আর উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো।

তবে শিশুদের কলকাকলিতে মুখর সকালের চিত্র পাল্টে যায় মাঝ আকাশে সূর্য গড়ানোর আগেই। দুপুরের দিকে মানুষের উপস্থিতিতে কিছুটা ভাটা দেখা গেলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে গমগম হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।

বিকেলের দিকে মেলার চারটি প্রবেশপথের সামনে দেখা গেছে সাপের মতো পেঁচানো দীর্ঘ সারি। খালি জায়গা কম থাকায় মেলার বাংলা একাডেমি অংশে হাঁটার জায়গাও পাচ্ছিলেন না অনেকে।

এরমধ্যেই বিকেল পৌনে ৪টার দিকে মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

তাকে ঘিরে শিশু-কিশোরদের জটলা, আর অটোগ্রাফ শিকারিদের মধুর আবদারে জেরবার জাফর ইকবাল। যদিও হাসিমুখেই সবার আবদার মেটাতে দেখা গেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের এই শিক্ষককে।  

অটোগ্রাফ শিকারিদের ভিড় সামলাতে দেখা যায় তাম্রলিপি প্রকাশনীর মালিক তারিকুল ইসলাম রণিকে। তাম্রলিপি থেকে এবার জাফর ইকবালের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ‘ক্রেনিয়াল’ বেরিয়েছে। আরেকটি বই ‘তিতুনি এবং তিতুনি’ এনেছে কাকলী প্রকাশনী।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “শিশুদের কাছে থাকা আমার জন্য সবসময় আনন্দের। যতই কষ্ট হোক আমি অটোগ্রাফ দিয়ে যাব।”

শিশু-কিশোরদের প্রিয়দের তালিকায় থাকা এই লেখকের দুটি বই বিক্রির শীর্ষে রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশনী সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে সকালে বইমেলায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সিসিমপুরের অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সিসিমপুরের বিভিন্ন আয়োজনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।

সেখানে শিশুদের প্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান সিসিমপুরের পাপেট চরিত্র হালুম, টুকটুকি ও ইকরির সঙ্গে সময় কাটান বার্নিকাট।

এরপর স্টেজ থেকে নেমে কোমলমতিদের সঙ্গে মিশে যান তিনি, মেটান তাদের ছবি তোলার আবদার।

অনুষ্ঠানে বার্নিকাট বলেন, “বই মানুষকে নিজ দেশের মানুষ ও সমাজের নানাবিধ বিষয় শেখানোর পাশাপাশি ভিন দেশের মানুষ ও তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে সহায়তা করে। নতুন ধ্যান ধারণাকে পাথেয় করে বড় হতে সহায়তা করে।”

উপস্থিত সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “শিশুরা ফুলের মত। প্রত্যেক শিশুই এক একটি ফুল। এই ফুলকে ফুটতে দিতে হবে।”

“শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়, শিশুদেরকে তাদের ইচ্ছেমত পড়তে দিতে হবে। ওদেরকে দেখাতে হবে আকাশ, নদী, পাহাড়, ফুল, পাখি ও জোনাকির সৌন্দর্য’, এ পরামর্শ তার। আর ‘এভাবে ওরা ফুলের মতো সুন্দর হবে।”

এ সময় অন্যদের মধ্যে ইউএসএআইডির মিশন ডিরেক্টর ইয়ানিনা জেরুজালেস্কি, বাংলা একাডেমির সচিব আনোয়ার হোসেন, ইফাদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ, আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিকুর রহমান ও সিসামি কর্মশালার বাংলাদেশ প্রতিনিধি আনোয়ার হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।