ইস্টার্ন ব্যাংকে ‘ভুতুড়ে ট্রানজেকশন’

গ্রাহকের অজ্ঞাতসারে তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলাসহ নানা ধরনের ‘ভুতুড়ে ট্রানজেকশনের’ ঘটনা ঘটেছে বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডে (ইবিএল)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2016, 11:23 AM
Updated : 12 Feb 2016, 01:03 PM

এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার বেলা ১২টা থেকে ইবিএলের সব এটিএম বুথ ছয় ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে বুথগুলো আবার চালু করা হয় বলে ব্যাংকের হেড অব কমিউনিকেশনস জিয়াউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

ঠিক কীভাবে কী ঘটেছে তা জিয়াউল করিমের কথায় স্পষ্ট বোঝা না গেলেও ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, প্রাথমিকভাবে তারা এটি ‘সাইবার অ্যাটাকের ঘটনা’ বলে মনে করছেন।

ইবিএলের আরেকজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, ‘ভুতুড়ে ট্রানজেকশনের’ ঘটনায় গত দুই দিনে কয়েকশ গ্রাহক লাখ লাখ টাকা খুইয়েছেন।

যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকের সাংবাদিক মাহবুবা আক্তার ডিনাও রয়েছেন।

তিনি জানান, শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠেই ৭টা ১৫ ও ৭টা ১৯ মিনিটে তিনি মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ব্যাংকের দুটি নোটিফিকেশন পান।

সেখানে দেখানো হয় শেওড়াপাড়ার এমটিবি (মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক) বুথ থেকে দুইবারে তার অ্যাকাউন্ট থেকে ৪০ হাজার করে মোট ৮০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে।

“কিন্তু কার্ড তো আমার কাছে। পিনও কেউ জানে না। কি হলো বুঝতে না পেরে ইবিএলের কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়েছিলাম। ওরাও জানালো আমার অ্যাকাউন্ট থেকে ওই সময় ৮০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে।”

এরপর পুরো বিষয়টি খুলে বললে ডিনার কাছ থেকে অভিযোগ রেখে খোঁজ নিয়ে দেখার কথা বলা হয় তাকে।

অবশ্য বিকাল পর্যন্ত দুইবার কাস্টমার কেয়ারে ফোন করেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সুখবর পাননি ডিনা। শুক্রবার ব্যাংক বন্ধ থাকায় লিখিত অভিযোগ জানানোও সম্ভব হয়নি তার পক্ষে।

বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে এ ধরনের ট্রানজেকশনের তথ্য পাওয়ার পর দুপুরের দিকে এক পর্যায়ে ইবিএলের সব এটিএম বুথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বুথের বাইরে নোটিশ ঝুলিয়ে বলা হয়, ‘কারিগরি ত্রুটির জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ’।

ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচের (এনপিএস) মাধ্যমে অন্য ব্যাংকের বুথ থেকেও ইবিএল কার্ড দিয়ে টাকা তোলা যায়নি তখন।

কখন আবার বুথ থেকে টাকা তোলা যাবে জানতে চাইলে ইবিএলের কল সেন্টারের সুপারভাইজর রেজাউল করীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সন্ধ্যার পর খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। আবার দেরিও হতে পারে।”

সন্ধ্যা ৬টার পর হেড অব কমিউনিকেশনস জিয়াউল করিম ইবিএল বুথ আবার চালু হওয়ার খবর দেন।

তিনি বলেন, “কতজন গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তা বের করা হচ্ছে। কোন কোন বুথ থেকে এসব হয়েছে তা ট্র্যাক করার চেষ্ট চলছে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”

ট্রাস্ট, যমুনা, ইউসিবিএল ও ঢাকা ব্যাংকের বুথ থেকেও ইবিএল কার্ড ব্যবহার করে গ্রাহকের টাকা তুলে নেওয়ার তথ্য পেয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানান।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাইবার অ্যাটাক কি না জানি না। ইদানিং তো হঠাৎ করে অনেক কিছুই হয়।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, “ইবিএলের বুথ বন্ধ রাখার বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েছে। গ্রাহকদের যে ক্ষতি হবে তা ব্যাংকই পূরণ  করে দেবে।”