মৃত্যুদণ্ড বিলোপ হবে না: আইনমন্ত্রী

বাংলাদেশে যে সব অপরাধের জন্য বর্তমানে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে, সেই দণ্ড বিলোপের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2016, 10:55 AM
Updated : 11 Feb 2016, 12:04 PM

তবে ভবিষ্যতে নতুন আইন করার ক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে প্রাণদণ্ড না রাখার ‘চেষ্টা করা হবে’ বলে জানিয়েছেন তিনি। 

বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মন্ত্রী এই বার্তাই দিয়েছেন।

মতবিনিময়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “মৃত্যুদণ্ড নিয়ে যখন (আলোচনায়) প্রশ্ন উঠেছে, তখন আমি স্পষ্টই বলেছি, যে সব অপরাধের জন্য বর্তমানে মৃত্যুদণ্ড সাজা হিসাবে রয়েছে, সেইগুলো কোনো পরিবর্তন হবে না।

“ভবিষ্যতে আমরা যখন নতুন আইন করব, আমরা চেষ্টা করব সেই নতুন আইনে….. যেহেতু মৃত্যুদণ্ড এখন সাজা হিসাবে খুব একটা গ্রহণযোগ্য নয়, সেই জন্য আমরা পরিবর্তন আনব।”

সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওই শাস্তির বিলোপ ঘটানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের দণ্ড কার্যকরের সময়ও ইইউ বিবৃতি দিয়ে তা রদ করতে বলেছে।

আইন মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা কোনো ঘটনার কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না করলেও তারা বাংলাদেশের আইনের সর্বোচ্চ সাজা হিসাবে ‘মুত্যুদণ্ড’ বিলোপের  প্রসঙ্গ তোলেন বলে আইনমন্ত্রী জানান।

তিনি বলেন, “আজকের বাস্তবতা হচ্ছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কেউ যদি কোনোমতে বাংলাদেশে বর্ডার ক্রস করতে পারেন এবং কোনো পশ্চিমা দেশে যান। তাহলে আর কোনোদিন তাকে ফিরিয়ে আনতে পারব না। কারণ তিনি কেবল দেখাবেন, এইটায় যে বাংলাদেশে ফাঁসির আইন আছে, ফিরিয়ে দিলে ফাঁসি দিয়ে দেবে।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের মধ্যে পলাতক কয়েকজনকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও এ ধরনের জটিলতায় পড়তে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে। 

সে কারণে ‘বাস্তবতার নিরিখে’ বিবেচনা করে ভবিষ্যতে যেসব ক্ষেত্রে এড়ানো সম্ভব, সেসব নতুন আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান না করার কথা বলেন আইনমন্ত্রী। 

“যেমন ফরমালিনের আইনে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড না রেখে যাবজ্জীবন রাখা ভালো। এই রকম আইন করলে আমরা সেখানে মৃত্যুদণ্ড না রাখার চেষ্টা করব।

“তবে অপরাধের গুরুত্ব বুঝে যদি আমরা মনে করি, মৃত্যুদণ্ড রাখাটাই অপরাধ দমনের সবচেয়ে ভালো অস্ত্র, তাহলে (নতুন আইনেও) মৃত্যুদণ্ড থাকবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নিয়েও বৈঠকে কথা হয়েছে। তিনি ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের বলেছেন, সরকার নতুন ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ করে ৫৭ ধারার ‘বিভ্রান্তিগুলো’ দূর করার ব্যবস্থা করছে।

তবে কীভাবে তা করা হবে- সে বিষয়ে কোনো তথ্য আনিসুল হক দেননি।

‘বাক স্বাধীনতায় ভারসাম্য’

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময়ে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক লেখক-প্রকাশক হত্যার প্রসঙ্গও আসে।

আইনমন্ত্রী বলেন, “ব্লগারদের হত্যার ঘটনা সম্পর্কে আমি বলেছি, একটা মামলার রায় হয়েছে। বাকিগুলোর তদন্ত হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আমরা দুটো জিনিস করার চেষ্টা করছি। এই হত্যাগুলোর বিচার ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করছি। এই রকম হত্যা যাতে না হয়, সেইভাবে আচরণ করতে এবং সকল পক্ষকে সংযত হতে আমরা অনুরোধ করছি।”

তবে কারও বাক স্বাধীনতা হরণ করার কোনো ইচ্ছা সরকারের নেই বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “জনগণের সরকার হিসেবে এটাও আমাদের দায়িত্ব, একজনের বাক স্বাধীনতা আরেকজনের বাক স্বাধীনতায় যাতে কোনো আঘাত না লাগে, সেই ভারসাম্যটা যাতে আমরা আনতে পারি।

“আমরা মনে করি, যদি সেই চেষ্টায় সফল হই, তাহলে এই রকম হত্যাকাণ্ড আর হবে না।”

আনিসুল হক জানান, ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে কোম্পানি আইন, বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশ এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কর্মকাণ্ড নিয়েও আলোচনা হয়েছে।