উচ্চ আদালতের বিচারকদের আচরণবিধি চান মন্ত্রী

দেশে উচ্চ আদালতের বিচারকদের জন্য আচরণবিধি থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2016, 08:56 AM
Updated : 11 Feb 2016, 06:15 PM

অবসরোত্তর সুবিধায় থাকা অবস্থায় হাই কোর্টের এক বিচারক যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর আইনজীবী হওয়ায় আলোচনার প্রেক্ষাপটে মন্ত্রীর এ মন্তব্য এলো।  

বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, “আজ বিচারপতিদের আচরণবিধি খুব প্রয়োজন হয়ে গেছে।”

এই আচরণবিধি করতে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গেও কথা বলবেন বলে জানান মন্ত্রী।  

সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগ থেকে গতবছর ১২ ডিসেম্বর অবসরে যাওয়া বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বুধবার আপিল বিভাগে জামায়াত নেতা মীর কাসেমের মামলার শুনানিতে উপস্থিত হলে এই আলোচনার সূত্রপাত হয়। 

বিষয়টি আদালতের নজরে আনার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, নজরুল ইসলাম চৌধুরী হাই কোর্টের বিচারক হিসেবে অবসরকালীন সুবিধায় সরকারি বাসভবন, গাড়ি ও গানম্যান পাচ্ছেন। এ অবস্থায় আইনজীবী হিসেবে মামলা লড়া ‘নৈতিকতার চরম বিরোধী’।

অন্যদিকে বিচারপতি নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আইনে সুযোগ আছে বলেই তিনি সরকারি সুবিধা ব্যবহার করছেন।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইনমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, “পত্রিকায় যদি সঠিকভাবে এসে থাকে… তিনি বলেছেন, নিম গাছেতো আর আম ধরবে না। তিনি প্রমাণ করেছেন, নিম গাছে আম ধরে না। উনি উনার কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করেছেন। উনি যেটা করেছেন… আমি প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করব… দেখেন।”

এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে কারও অধিকার ক্ষুণ্ন না করেই তারা অনেক কথা বলতে পারেন। বিচারকদের জন্য আচরণবিধি করার বিষয়ে সেভাবেই তিনি কথা বলবেন।    

“আমরা বিচারপতিদের এতো শ্রদ্ধা করি… এ ধরনের আইনের প্রয়োজন আছে বলে কখনো মনে হয়নি। তারা বিবেক দ্বারা চালিত হবেন। তাদের এটা বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই যে, কী আচরণ তারা করবেন।

“সেই জন্যই কিন্তু এতোদিন কোনো রুলস ছিল না। রায় লেখার ব্যাপারে বলেন, এই ঘটনায় বলেন… উনাদের বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। উনারা নিজেরাই সেটা করবেন।

“কিন্তু আজ বাস্তবতায় এটা উপলব্ধি করা যাচ্ছে, সেই প্রেক্ষিত আর নাই। দুঃখের হলেও এটা সত্য। সেই জন্য আমরা মনে হয়, এটার ব্যাপারে রুল করে দেওয়া উচিত।”

আনিসুল হক বলেন, তার বাবা সিরাজুল হকও একসময় আইনজীবী ছিলেন। তখন তিনি দেখেছেন, বিচারকরা যতোদিন এলপিআরে ছিলেন, ততোদিন তারা কোর্টে যাননি।

“কিন্তু আজ এই ভদ্রলোকের ব্যাপারে যেটা হলো, সেটা হচ্ছে, উনি ১২ তারিখে ছেড়েছেন, ১৩ তারিখেই তিনি কোর্টে এসেছেন। তখনও তিনি বিচারপতির বাসা ছাড়েন নাই।”

সংবিধানের ৯৯ অনুচ্ছেদের ২ এর (১) অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি হাই কোর্ট বিভাগের বিচারক পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর আপিল বিভাগে ওকালতি করতে পারেন।

এ প্রসঙ্গ টেনে আইনমন্ত্রী বলেন, “বিচারপতিদের অধিকার আছে আপিল বিভাগে প্র্যাকটিস করার। তারা যদি আপিল বিভাগে প্র্যাকটিস করতে আসেন, তাহলে তাদের সরকারি সুবিধা ত্যাগ করে আসা উচিত। যদি ত্যাগ করতে না পারেন তাহলে সেগুলো শেষ করে আসা উচিত।

“কারণ তারা হচ্ছেন সমাজের দৃষ্টান্ত, রোল মডেল। তারা এমন কাজ করবেন, যেটা অনুসরণীয় হবে। আমি মনে করি, এখন সময় হয়েছে এগুলো ভেবে দেখার।”