দেদারসে বিকোচ্ছে অভিধান

সব বয়সে অভিধানের উপর নির্ভরশীলতা রয়েই যায়। বইমেলায় বিভিন্ন ধরনের বইয়ের ভিড়ে অভিধান বিক্রির কাটতিও সে কথাই বলছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2016, 03:15 PM
Updated : 10 Feb 2016, 03:15 PM

বাংলা একাডেমি থেকে বের হওয়া নানা ধরনের বইয়ের সমাহারে অভিধানের বিক্রি যে অনেক এগিয়ে তা তাদের স্বতন্ত্র স্টল দেখেই ঠাহর করা সম্ভব; অভিধানের জন্য সংস্থাটি বসিয়েছে আলাদা স্টল।

শুধু বাংলা একাডেমি নয়, অন্যান্য প্রকাশনীগুলোও অভিধান বিক্রি নিয়ে উল্লসিত।

১৯৫৫ সালে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর প্রথম অভিধান ছিল ‘আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’, যার কাজ শুরু হয় ১৯৫৮ সালে। এরপর ১৯৬১ সালে শুরু হয় ব্যবহারিক বাংলা অভিধানের কাজ।

এভাবে ষাট বছরে ২১টি অভিধান প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। এবার এনেছে ‘আধুনিক বাংলা অভিধান’।

বুধবার কথা হয় মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে বাংলা একাডেমি প্যাভিলয়নের ব্যবস্থাপক মাইনুল ইসলামের সঙ্গে।

বললেন, “প্রতিবারই আমাদের অভিধানের চাহিদা থাকে বেশি। অন্যান্য বইয়ের বাইরে অভিধানই বিক্রির শীর্ষে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।”

সেখানে অভিধান বিক্রির জন্য পৃথকভাবে বসানো বিক্রয়কেন্দ্রে দায়িত্বরত সাজ্জাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ইংরেজি থেকে বাংলা ও বাংলা থেকে ইংরেজি অভিধানে বিক্রি বেশি। নতুন আসা আধুনিক বাংলা অভিধানও বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, বানান অভিধান, উচ্চারণ অভিধানের বিক্রিও ভাল বলে জানান তিনি।

সময় গড়ালে বিক্রি আরও বাড়ার আশা প্রকাশ করে সাজ্জাদ জানান, ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথক বিক্রয় কেন্দ্রটিতে বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই গড়ে ১৫ হাজার টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া বাংলা একাডেমি থেকে বের হওয়া অভিধানগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা ভাষার অভিধান, ঐতিহাসিক অভিধান, চরিতাভিধান, ছোটদের অভিধান, বাংলা বানান অভিধান, বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান, বাংলা উচ্চারণ অভিধান, তিন খণ্ডের বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান, সমকালিন বাংলা ভাষার অভিধান, সহজ বাংলা অভিধান।

অন্যান্য বইয়ের পাশাপাশি অভিধানের ক্ষেত্রেও ৩০ শতাংশ হারে কমিশন দিচ্ছে বাংলা একাডেমি।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমি প্যাভিলিয়নের সামনে থেকে ইংরেজি-বাংলা ও বাংলা-ইংরেজি অভিধান কিনে ফেরার পথে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী দীপন আহমেদের সঙ্গে।

প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থী বলেন, “অভিধান দু’টি আমার কাছে আগে থেকে ছিল। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর ছোটো বোনকে দিয়ে এসেছি। বইমেলায় নিজের জন্য সংগ্রহ করলাম।”

অভিধান কিনে এবার অন্যান্য স্টলে ঘুরে পছন্দের বই কেনার কথা জানান দীপন।

কলকাতা থেকে বের হওয়া এ টি দেবের ‘স্টুডেন্টস ফেভারিট ডিকশনারি’র বাংলাদেশে একমাত্র পরিবেশক হাক্কানী পাবলিকেশন্স।

স্টলে ইংরেজি থেকে বাংলা অভিধানটি বেশ বিক্রি হচ্ছে বলে জানান সংস্থাটির বিক্রয়ের দায়িত্বে থাকা আব্রাহাম বাড়ৈ বাবু।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত অভিধান ভালই বিক্রি হচ্ছে। মেলাতো এখনও জমেনি। জমলে বিক্রি আরও বাড়বে।”

ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) প্রকাশ করেছে প্রয়াত বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘যথাশব্দ’ অভিধান।

ইউপিএলের বিক্রয় উন্নয়ন কর্মকর্তা জরিফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যথাশব্দ-এর বিক্রি অনেক ভাল। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বেশি কিনছে।”

অন্যদিকে, ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত খন্দকার মাহমুদুল হাসানের ‘ঢাকা অভিধান’, আবদুল মান্নান স্বপনের ‘গালি অভিধান’, অবসরে পূরবী বসুর ‘সম্প্রীতির জন্যে শব্দাবলি’ এবং ড. প্রদীপ রায় ও মালবিকা বিশ্বাসের ‘পরিভাষা অভিধান’ ভাল বিক্রি হচ্ছে বলে সেখানকার একজন বিক্রয়কর্মী জানান।

একাডেমির তথ্যানুযায়ী বুধবার মেলায় নতুন বই এসেছে ১০৫টি। এর মধ্যে গল্প ১৯ উপন্যাস ২১, প্রবন্ধ ৩, কবিতা ২৮, গবেষনা ১, ছড়া ৬, জীবনী ৪, মুক্তিযুদ্ধ ২, বিজ্ঞান ১, ভ্রমণ ১, সায়েন্সফিকশন ১ ও অন্যান্য ১৮টি।

বিকেলে মেলামঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ’বাংলাদেশে শিশুসাহিত্য চর্চা : অতীত থেকে বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা সভা।

গবেষক রশীদ হায়দারের সভাপতিত্বে এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শাহীন আখতার। আলোচনায় অংশ নেন আসলাম সানী, রাশেদ রউফ ও সুজন বড়ুয়া।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয় কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর ও ঘাসফুল শিশু-কিশোর সংগঠনের শিল্পীরা।