পার্বত্য সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবে: প্রধানমন্ত্রী

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির অধিকাংশ বিষয়ই বাস্তবায়িত হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাহাড়ের সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে সরকার এগিয়ে চলছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2016, 01:51 PM
Updated : 28 Feb 2016, 04:06 PM

চুক্তিকারী পাহাড়ি পক্ষ জনসংহতি সমিতির নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমার) ক্ষোভের প্রেক্ষাপটে বুধবার সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন সরকার প্রধান।

এরপর সম্পূরক প্রশ্নে পার্বত্য রাঙামাটির সংসদ সদস্য জনসংহতি নেতা উষাতন তালুকদার প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, পার্বত্য শান্তিচুক্তি কবে সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে?

“যে বিষয়গুলো এখনও হয়নি, সেগুলো করা হবে.... যে ধারাগুলো এখনও বাস্তবায়িত হয়নি, সেটা আমরা বাস্তবায়ন করব,” বলেন শেখ হাসিনা।

চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “পার্বত্যবাসী আমাদের দেশেরই নাগরিক, সুখ-দুঃখের সাথী। তাদের যদি কোনো দুঃখ থাকে, তা নিরসনের দায়িত্ব আমাদেরই।”

এই চুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো কোনো বিদেশি শক্তিকে সম্পৃক্ত না করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “তাদের (পার্বত্যবাসী) ভালোমন্দ যদি আমরা না বুঝি, বাইরের কেউ বুঝবে না।”

১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় জনসংহতি সমিতির সঙ্গে সরকারের শান্তি চুক্তি হয়, যার মধ্য দিয়ে পাহাড়ে কয়েক দশকের হানাহানি বন্ধ হয়।

চুক্তির আওতায় গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা চুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ার ক্ষোভ থেকে পুনরায় সশস্ত্র লড়াইয়ের যুগে ফিরে যাওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন মাঝে-মধ্যে, দাবি জানাচ্ছেন চুক্তি বাস্তবায়নে রোড ম্যাপ প্রণয়নেরও। 

পার্বত্যাঞ্চলে ভূমি সমস্যার সমাধান না হওয়া এবং সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব নিয়েও ক্ষুব্ধ গেরিলা জীবন থেকে ফিরে আসা এই পাহাড়ি নেতা।  

প্রধানমন্ত্রী সংসদে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সার্বিক চিত্র তুলে ধরে ভূমি সমস্যার সমাধানে ভূমি কমিশনকে আরও সহযোগিতা করতে পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান।

“এ সমস্যাকে আমরা রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে দেখেছি এবং বলেছি মিলিটারির মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, আলোচনা করে সমাধান করতে হবে,” বলেন শেখ হাসিনা।

সন্তু লারমা, বার বার প্রকাশ করছেন তার ক্ষোভ

এই প্রসঙ্গে সন্তু লারমাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “আঞ্চলিক পরিষদ বা তার চেয়ারম্যান আরও সক্রিয় হলে হাতে আরও সময় বেশি পেতাম।”

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি চার খণ্ডে বিভক্ত। ‘ক’ খণ্ডে চারটি, ‘খ’ খণ্ডে ৩৫টি, ‘গ’ খণ্ডে ১৪টি এবং ‘ঘ’ খণ্ডে ১৯টি ধারা রয়েছে।

এই ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়া ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়ন এবং নয়টি ধারা বাস্তবায়নের কাজ চলছে।  

ভূমি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদের কাছে হস্তান্তরের আগে এই বিভাগগুলোর সক্ষমতা অর্জনের উপরও গুরুত্ব দেন তিনি।

“জেলা পরিষদকে শক্তিশালী ও আঞ্চলিক পরিষদ ইতোমধ্যে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। সেসমস্ত কার্যক্রম করবেন তা আঞ্চলিক পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করে করবেন।”

চুক্তি অনুযায়ী খাগড়াছড়িতে ৩০টি, রাঙ্গামাটিতে ৩০টি এবং বান্দরবানে ২৮টি বিভাগ জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও সংসদে জানানো হয়।

সংসদে শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

পার্বত্যাঞ্চল থেকে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প প্রত্যাহার প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, অনেক অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরকালীন ২৩২টি অস্থায়ী ক্যাম্পের মধ্যে গত ১৭ বছরে কয়েকটি ধাপে অর্ধেকের বেশি প্রত্যাহার করা হয়েছে।

“শান্তি চুক্তির খণ্ড ‘ঘ’. ধারা ১৭(ক)-এর আলোকে মোতায়েনরত সেনাবাহিনীর সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ছয়টি গ্যারিসন; দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, রুমা ও আলীকদমে প্রত্যাবর্তনের বিধান রয়েছে।”  

চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ভারত প্রত্যাগত ১২ হাজার ২২৩টি শরণার্থী পরিবারকে ইতোমধ্যেই পুনর্বাসিত করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

“প্রতিটি পরিবাকে ৫০ হাজার নগদ টাকা প্রদান করা হয়েছে। ২০ বছর পূর্বে যারা চাকরি স্থান ত্যাগ করে চলে গিয়েছিল, তাদের পুনরায় চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিধিমালা শিথিল করে পার্বত্যবাসীদের পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীতে চাকরি দিয়েছি।”

“শান্তি চুক্তি যখন করেছি, কাজেই চুক্তির ধারাগুলো আমরা বাস্তবায়ন করব। আমরা আরও আগেই বাস্তবায়ন করতে পারতাম, কিন্তু হাতে সময় ছিল না। যে ধারাগুলো এখনও বাস্তবায়িত হয়নি সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি,” বলেন শেখ হাসিনা।