সিম নিবন্ধনে হয়রানি বন্ধে ‘মোবাইল টিম’

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনে গ্রাহক হয়রানি বন্ধে মন্ত্রণালয় ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার ‘মোবাইল টিম’ মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2016, 08:58 AM
Updated : 10 Feb 2016, 02:14 PM

বুধবার ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে সিম নিবন্ধনের কাজ দেখার পর মিরপুর এক নম্বর সেকশনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “মোবাইল টিম দেখবে গ্রাহকরা কোনো হয়রানির শিকার হচ্ছেন কি না। অভিযোগ প্রমাণ হলে অপারেটরদের চিহ্নিত করে হয়রানির মূল্য দিতে হবে।”

কয়টি ‘মোবাইল টিম’ এ কাজে মাঠে থাকবে জানতে চাইলে তারানা বলেন, “অবৈধ হ্যান্ডসেট উদ্ধারসহ অন্যান্য কাজে কয়েকটি দল মাঠে আছে। তারাই এ কাজ করবে।”

“মোবাইল টিম আজ থেকে কাজ শুরু করবে এবং যারা আসছেন প্রত্যেকের অভিযোগ গ্রহণ করবে। এজন্য প্রয়োজন হলে অপারেটরদের সিইওদের ডাকব, আজ কিংবা কাল।”

গত ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হয়। এর ফলে গ্রাহকরা আঙুলের ছাপ ছাড়া নতুন সিম কিনতে পারছেন না। পাশাপাশি বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুরনো সিমের পুনঃনিবন্ধন চলছে, যা এপ্রিলে শেষ করার কথা।

প্রতিমন্ত্রী তারানা জানান, অভিযোগ আছে, কিছু ‘রিটেইলার’ বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে টাকা নিচ্ছেন, কিছু জায়গায় গ্রাহক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, পুরাতন সিমের ব্যাপারে আবার আসতে বলা হচ্ছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয় থাকতে হচ্ছে।

মোবাইল ফোন অপারেটরদের সতর্ক তিনি বলেন, “… মোবাইল ফোন অপারেটরদের জানিয়ে দিতে চাই, সেটি হচ্ছে, এদেশে ব্যবসা করছেন, জনগণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বলে ব্যবসা করতে পারছেন। সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছেন।

“অমি সুস্পষ্ট বলতে চাই, কোনো রকমের অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নাই। কারণ জনগণের জন্য কাজ করি, একজনের ভোগান্তিও আমরা মেনে নেব না।”

মোবাইল ফোন অপারেটরদেরকে ডিজিটাল বাংলাদেশে উন্নয়ন সহযোগীর মত আচরণ করতে হবে মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “তারা যদি মনে করেন বাংলাদেশের মানুষ জিম্মি হয়ে গেছেন, … এটা করতে দেওয়া যাবে না।

“একজন গ্রাহকের ভোগান্তিও যেন অত্যন্ত সিরিয়াসভাবে গ্রহণ করি। কারণ জনগণের পয়সা দিয়ে আমরা চলি, তারা (অপারেটররা) চলেন, কাজেই জনগণের ভোগান্তি চলবে না। এই বার্তাটি পৌঁছে দিতে চাই, কারণ অভিযোগ আসছে।”

এপ্রিলের মধ্যেই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন শেষ করার ওপর জোর দিয়ে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, “এপ্রিল অপাতত নির্ধারিত সময় সীমা। যারা পুনঃনিবন্ধন করবে না, তাদের সংযোগ ক্রমান্বয়ে একঘণ্টা বন্ধ করব, কখনও দুই ঘণ্টা বন্ধ রেখে বার্তা পৌঁছাব।

“নির্ধারিত সময় পারপর বন্ধ, তারপর এক দিন বন্ধ, তারপর ৩/৪ দিন বন্ধ, আবার দু’দিন বন্ধ থাকবে- এভাবে তাদের কাছে বার্তা যাবে।”

অপারেটর গ্রামীণফোনের একটি সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমি অভিযোগ পেয়েছিলাম, নাবিস্কো মোড়ে গ্রামীণফোন সেন্টারে মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে, মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, রি-রেজিস্ট্রেশন করছে না। তবে আজ সুষ্ঠভাবে হচ্ছে, তার মানে সংবাদটি লিক হয়েছে, আমি সেখানে যাব।”

মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় কাস্টমায় কেয়ার ও নিবন্ধন স্থান পরিদর্শন করলেও কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।

এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ভিআইপিদের সিম ক্লোন করে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “এই সেক্টরে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করছি। এইভাবে … কোনো কিছু চলতে পারে না। এই সেক্টরে যেরকম অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অপারেটররা কাজ করেছেন, সেইদিন এখন অতীত মনে রাখতে হবে।”

এর আগে ২৮ জানুয়ারি সচিবালয়ে মোবাইল ফোন অপারেটদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, সিম নিবন্ধনে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে তিনি ফেইসবুকে অনেক অভিযোগ পাচ্ছেন। অথচ এ কাজে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই।

সিম নিবন্ধন বা পুনঃনিবন্ধনের সময় গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা আদায় করলে সংশ্লিষ্ট ‘রিটেইলারকে’ কালো তালিকাভুক্ত করে তার অনুমোদন বাতিল করা হবে বলেও ওই বৈঠকের পর জানান তিনি।