আমি এখন অনেক সতর্ক: হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে অতীতের চেয়ে এখন ‘অনেক সতর্ক’ তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2016, 08:44 AM
Updated : 10 Feb 2016, 02:27 PM

বুধবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ ও গবেষকদের বিশেষ অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

এর আগে উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ পরে বিএনপির আমলে বন্ধ করে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমার অভিজ্ঞতা আছে, এভাবে কাজ করে গেলেও পরে যদি সরকার পরিবর্তন হয় এবং সে সরকার যদি… তাদের দেশপ্রেম না থাকে.. দেশের মানুষের প্রতি যদি তাদের কোনো দায়িত্ববোধ না থাকে… তাহলে যে কোনো সময় যে কোনো  কিছু বন্ধ করে দিতে পারে।

“এখন আমি অনেক সতর্ক,” বলেন সরকার প্রধান।

শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে জানান, ১৯৯৬ সালে তার সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘অনেক মেধাবীকে’ গবেষণার জন্য বিদেশে পাঠিয়েছিল। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে ‘অনেকের গবেষণার মাঝপথে’ তা বাতিল করে দেয়।

গবেষণা যাতে কেউ বন্ধ করতে না পারে সেজন্য বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপকে ট্রাস্ট ফান্ডে রূপান্তর করা হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশে-বিদেশে বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর লেখাপড়া ও গবেষণার জন্য বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (এনএসটি) ফেলোশিপ এবং গবেষকদের বিশেষ অনুদান দেওয়া হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালের ফোলোশিপ ও অনুদানের চেক তুলে দেন।

বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী দেশের শিক্ষা, অর্থনীতিসহ সার্বিক অগ্রগতির বিষয়েও কথা বলেন।

পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির বড় ধরনের বাঁক বদল হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা কিন্তু নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু করেছি। আমরা মনে করি বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা একটা টার্নিং পয়েন্ট।

“আগে যারা বাংলাদেশকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করত, মনে করত বাংলাদেশ ভিক্ষা চেয়ে চলবে। এখন তারা দেখছে- না, বাংলাদেশ তা নয়। বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী দেশ। আমাদেরকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। যেমন পদ্মাসেতু নিয়ে যে ষড়যন্ত্র; আমাকে, আমার পরিবারকে দুর্নীতিবাজ বানানোর চেষ্টা, আমার দেশকে হেয় করার চেষ্টা।

“আমি যখন চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করলাম, সেখানে দুর্নীতির কোনো কিছু তো তারা দেখাতে পারল না।”

বাংলাদেশকে একটা শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই তার সরকারের লক্ষ্য বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

“এখানে যে জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা, ছাত্র-ছাত্রী কলেজ-স্কুলে যেতে পারবে না অথবা বোমা হামলার শিকার হবে, শিশুদের হত্যা করা হবে- এই দৃশ্য আমরা দেখতে চাই না। বাংলাদেশের কেউ এটা চায় না।

“সবাই নিরাপদে চলবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবে, উন্নত জীবন ধারন করবে- সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”

প্রযুক্তির বিকাশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আজকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বদৌলতে বিশ্বটা কিন্তু এখন হাতের মুঠোয়।”

বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে সময়োপোযোগী করে গড়ে তুলতে তথ্য-প্রযুক্তিতে সরকারের নানা পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন তিনি।

লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতি চর্চা ও খেলাধুলাতেও শিক্ষার্থীদের মন দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মেধা থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। আমরা সেটাই করছি।”

শিক্ষাকে সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে মন্তব্য করে তিনি জানান, শিক্ষাকে তার সরকার আরও যুগোপযোগী করতে চায়।

আর্থিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিশ্বের কাছে আজ বাংলাদেশ বিস্ময়। এ প্রবৃদ্ধি কোনো যাদুবলে হয়নি। দেশ ও জাতির প্রতি ‘কর্তব্যবোধ, মমত্ববোধ ও ভালবাসা’ থাকলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।”

২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।